সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কাফনের কাপড় পাঠিয়েও হত্যার হুমকি আসে কয়েকবার। শুধু তিনি নন। তার স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হকও হুমকি থেকে বাদ যাননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করেছে। হামলার সময় ঘটনাস্থলেও পুলিশ ছিল। কিন্তু লোকারণ্য সমাবেশে ধীরে ধীরে গা ঘেঁষে হঠাৎ পকেট থেকে ছোট ছুরি বের করে এই হামলায় পুলিশের তেমন কিছু করার ছিল না বলে জানিয়েছেন ড. ইয়াসমীন হক। তারপরও পুলিশ বাধা দিয়েছে।
গতকাল রোববার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) প্রশাসনিক ব্লকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। শনিবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে জাফর ইকবাল নিজেই আমাকে ফোন করে হামলার কথা জানায়। তিনি বারবার বলছিলেন আমি ঠিক আছি। তবে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমার কথা বলার অবস্থা নাও থাকতে পারে। তবে আমি সুস্থ হয়ে উঠবো।
ইয়াসমীন হক জানান, এ ছাড়া তিনি বারবার বলতে থাকেন, ছাত্রদেরকে বুঝাও। জানাও যে আমি ভালো আছি। তারা যাতে উত্তেজিত না হয়ে পড়ে। ভাঙচুর না চালায়। শান্ত থাকে।
হামলার পর তাকে শিক্ষার্থীরা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও ওসমানী মেডিকেলে দ্রুততার সঙ্গে সযত্নে চিকিৎসা দেয়ার কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তৎক্ষণাৎ নির্দেশে ঢাকায় সিএমএইচে আনার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমি ও জাফর ইকবাল গত দু’বছরে বহু হুমকি পেয়েছি। কাফনের কাপড়ও পাঠানো হয়েছে। এজন্য সরকার যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে পুলিশ পাহারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাফর ইকবাল এভাবে পুলিশ বেষ্টিত হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না। এমন বন্দি জীবন ভালো লাগে না। তিনি সভা-সমাবেশে, ক্লাসে, নিজের কক্ষে ছাত্রদের সঙ্গে অবাধে মিশতে চান। অনেক সময় বিরক্ত হয়ে পুলিশ সদস্যদের সরে যেতে বলেন। কঠোরভাবেই বলেন। তারপরও পুলিশ তাদের বেস্টটা দিচ্ছে। শনিবারও পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। নিরাপত্তা দিচ্ছিল। কিন্তু কেউ যদি হঠাৎ পকেট থেকে ছোট অস্ত্র বের করে হামলা করে তাহলে পুলিশ কী করবে। তবু পুলিশ বাধা দিয়েছে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহতও হয়েছে। আর ওটা ছিল মুক্তমঞ্চ। অনেক লোক। শত শত শিক্ষার্থী। তার কাছে গিয়েও দাঁড়িয়েছে। হামলার পর তিনি যখন মাথা তুলে উঠে দাঁড়ালেন তখন অনেকেই দেখেছেন তার মাথায় রক্ত।
তিনি আরো বলেন, দেশের চিকিৎসার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। জাফর ইকবালকে বাইরে নেয়ার প্রয়োজন নেই। এখানেই সে ভালো চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছে। তার চিকিৎসার স্বার্থে তিনিও তখন পর্যন্ত জাফর ইকবালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি বলে জানান। বলেন, আমি আমাদের আত্মীয়স্বজনদেরকেও এখানে আসতে বাধা দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি যাতে জাফর ইকবাল সুস্থ হয়ে উঠে সেই দোয়া করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ৫টা কোর্স আছে। দ্রুত তাকে ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে।