× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রম্য রচনা /শ্বশুরবাড়ির লাড্ডু

ষোলো আনা

ইমরান আলী
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার

শ্বশুর লাড্ডু, পোলাওয়ের চাল আর কিছু কাঁচা সবজি পাঠিয়েছেন। মাঝে মাঝেই পাঠান। আমি মেয়েজামাই হিসেবে এসবে না করি না। বরং খুশিই হই। আজকে বউ তার বাবার বাড়ি থেকে আসা ব্যাগ পুরো না খুলেই ‘ওয়াও’ বলে একটা চিৎকার দিলো।

অথচ আমি তাকে দামি গয়না গিফট করেও এত খুশি হতে দেখিনি। ‘ওয়াও’ শব্দ শুনে ভাবলাম বিশাল কিছু পাঠিয়েছে তার বাবা-মা।
দৌড়ে গেলাম।

কী হইছে এত খুশি যে?
সে বলল, ওরে জান, আম্মু পেঁপে পাঠিয়েছে।
এতে ‘ওয়াও’ এর কী আছে?

তুমি জানো সারা শহর খুঁজে এমন পেঁপে পাইনি সেদিন!
কী বল! ঢাকা শহরে এমন পেঁপে পাওনা,  গাঁজাখুরি কথা।

ঢাকায় পাওয়া যায় কিন্তু এই সাইজের, এমন সতেজ ত্যাড়াব্যাকা তো আর পাওয়া যায় না।

আমি আর কিছু বললাম না। কারণ, মেয়েদের কাছে বাপের বাড়ি থেকে পাঠানো সবকিছুই মূল্যবান।

বাপের বাড়ির পেঁপে আর ঢাকার পেঁপে যে আলাদা তা মানতেই হবে।
আধাঘণ্টা পর দেখি বউ চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

বললাম, কী হয়েছে চোখে? ডাক্তারের কাছে চলো। কুইক। চোখ নিয়ে হ্যালাফেলা করতে নেই।
সে চোখ বন্ধ করেই বলল, জানরে আম্মু নারিকেল তেলও পাঠাইছে। মাথায় দিয়ে মনে হচ্ছে কত দিন পর মাথাটা একটু হালকা লাগছে... আহ কি শান্তি!

বউরে এই তেল তো সবখানেই পাওয়া যায়। এতে হালকা হওয়ার কী আছে।
বউ এবার চোখ খুলল। চোখ তার আগুনের মতো রঙ ধারণ করেছে।

আহ! চোখ বন্ধই তো ভালো ছিল।

সে ক্ষেপে গিয়ে বলল, ও আমার বাপের বাড়ির কোনো জিনিস ভালো না, না?
হ্যাঁ, আমার বাপতো সব আজেবাজে জিনিস পাঠাইছে। এসব তো খারাপ।
তোমাদের ঢাকার সব ভালো। আমার বাপের বাড়ির এই পচাধচা নিয়েই আমি থাকবো।
গজগজ করতে করতে রান্না ঘরে গেল।

আমার ওপর রাগ দেখালেও সে রান্না ঘরে বাপের বাড়ি থেকে আসা জিনিসপত্র আবার মন দিয়ে সাজিয়ে রাখছে।
এমন সুন্দর করে সাজাচ্ছে নিজের সংসারের শোকেইসটাও এমন করে সাজায়নি কোনো দিন।

আমি আড়াল থেকে দেখছি। মেয়েদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার নিজের সংসার। তবুও যখন বাপের বাড়ি থেকে কিছু আসে তখন তারা আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। সেটাকে বুকে আগলে ধরে। সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের চেয়ে আপন আর কী আছে। তবুও এই বাবা-মাকে ছেড়ে মেয়েদেরকে চলে আসতে হয় স্বামীর সংসারে। এটাই  নিয়ম। ছেলেরা হাসি মুখে বউকে কবুল বলে তুলে নিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েদেরকে আসতে হয় সব ছেড়ে। আমি রান্নাঘরে বউয়ের এই সাময়িক খুশিতে নিজেও আবেগ আপ্লুত হলাম। আসলে তার বাবার বাড়ি থেকে পাঠানো  পেঁপে, তেল, ডাল অবশ্যই অমূল্য। জানি সে কিছুক্ষণ পর নিজের সংসারের দিকে আবার মনে প্রাণে হারিয়ে যাবে...

আমি বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে দেয়া লাড্ডু মুখে নিয়ে নিজেও এবার চোখ বন্ধ করে রইলাম...আহ কী স্বাদ! পরম শান্তি লাগছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর