পূজার ঢাক বাজলো বলে। বাকি মাত্র ৩ দিন। পূজা উৎসবে মেতে উঠেছে শরতের আকাশ- বাতাস। মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর আগমনী সুর। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। এ সময় দম ফেলার অবকাশ পাচ্ছেন না তারা। বসে নেই পূজা উদ্যাপন কমিটি। তোরণ নির্মাণ ও মণ্ডপকে নানা রঙে সাজাতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
ঢাকার বেশ কিছু মণ্ডপ ঘুরে এমনটাই চোখে পড়ে।
ঢাকার কলাবাগান মাঠে বেশ জাঁকজমক ভাবে সাজসজ্জা চলছে। বাঁশের তৈরি তোরণ দাঁড়িয়ে আছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। মাঠের এক পাশে ছাউনির ভেতর প্রতিমার কাজ চলছে। প্রতিমা শিল্পী সুদেব পালের রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। আর তাকে সাহায্য করছে বিভিন্ন বয়সের তিন শিল্পী।
প্রতিমা শিল্পী সুদেব পাল জানান, ১৬-১৭ বছর যাবৎ প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। পূজা উদ্যাপন কমিটির চাহিদা মতো তিনি প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন সেগুলোকে সাজানোর পালা। দুর্গা ও তার বাহনকে সাজানো প্রায় শেষ। বাকি কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, ও সরঃস্বতী প্রতিমায় তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে খামার বাড়ি সংলগ্ন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন কমল রায়। তিনি দুর্গার ত্রিনয়ন আঁকছেন। তার দাবি, শুধু টাকার প্রয়োজনে প্রতিমা গড়েন না। মাকে ভালোবেসে এই পেশায় কাজ করছেন ১৮ বছর ধরে। অনেকটা নেশা জন্মেছে এই কাজের প্রতি। কাজ শেষে প্রতিমার দিকে তাকিয়ে শান্তি পাই।
রাজধানীর মণিপুরীপাড়ায় দুর্গা মন্দিরের ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে প্রতিমা তৈরির কাজ এখনো খানিকটা বাকি। কার্তিকের মুখের আদল গড়ছেন মানিক পাল। তাকে মাটি মেখে সাহায্য করছে আরেক শিল্পী। পাশেই গণেশের উদর গড়ছেন সুমন রায়। সুমন জানান, হাতে সময় একদম নেই, তাই দিন- রাত সমানে কাজ করতে হচ্ছে। মানিক পাল এই মন্দিরের প্রধান কারিগর। প্রতিমা বানানোর কাজ তো শেষ হয় নাই, রং কখন করবেন? প্রশ্নের উত্তরে মানিক পাল বলেন, ‘প্রতিমা গড়ার কাজ আগেই শেষ হইতো, কিছু ঝামেলার জন্য হয়ে উঠে নাই, দেখি মা চাইলে কাইল থেইক্যা রং দেয়া শুরু করুম।’ ঝামেলার প্রসঙ্গ টানলে এড়িয়ে যায় প্রতিমা শিল্পী মানিক পাল।
এবছর ১৫ই অক্টোবর থেকে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহা দুর্গা উৎসব। তাদের মতে, এই দিন দেবী দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যে বাপের বাড়ি আসেন। সঙ্গী হবেন পুত্ররূপে ঠাঁই পাওয়া অশুরও। দূর থেকে শিব অনুসরণ করবেন দেবীকে। দেবী দুর্গাকে সকল দুঃখের নাশকারিণী বলে মানা হয়।
মহাষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, কাঁসা আর ঢাকের তালে কেঁপে উঠবে বাংলার আকাশ বাতাস। পর্যায়ক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে ভাগ ভাগ হয়ে দুর্গাপূজা পালিত হবে। দশমীতে হবে প্রতিমা বিসর্জন।
পূজাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেখা গেছে পুলিশের টহল। পূজা চলাকালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল হায়দার বাবুল জানান, আমাদের কড়া নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়।