প্রায় সকলের হাতের নাগালেই এখন ইন্টারনেটের সুবিধা চলে আসছে। অসুস্থ হলে আমরা অনেকেই রোগের লক্ষণগুলো লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে থাকি। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৭২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য জানতে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে থাকেন।
কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন ইন্টারনেটে আনুসন্ধান করা তথ্যগুলো কতটা সঠিক? অথবা আপনার রোগের লক্ষণগুলো ইন্টারনেট কতটুকু সঠিকভাবে নির্ণয় করতে প্রস্তুত?
গুগলে সার্চ দেয়ার আগে আমাদের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিতঃ
১. যে কেউ ইন্টারনেটে কন্টেন্ট প্রকাশ করতে পারেন
পুরো বিশ্বে ইন্টারনেটের বিস্তৃতি বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেটে যেকোন বিষয়ে সার্চ দিলে আমরা বিশেষ করে গুগলে অনেক ফলাফল পেয়ে যাই। এসবের বেশিরভাগই হতে পারে কোন ব্যক্তির নিজস্ব সাইট অথবা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ থেকে কপি করা অথবা কারো নিজস্ব ব্লগসাইটের। সেক্ষেত্রে আপনার রোগের লক্ষণগুলো ইন্টারনেটের সেই কন্টেন্টগুলো কতটা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারবে অথবা কতটা সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
২. উইকিপিডিয়া বিশ্বাসযোগ্য তথ্যসূত্র নয়
অবাক করা কথা হচ্ছে উইকিপিডিয়া হচ্ছে মেডিকেলের বিভিন্ন তথ্যের অনুসন্ধানে প্রথমসারির জনপ্রিয় ষষ্ঠ ওয়েব সাইটের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই উইকিপিডিয়ায় দেয়া নিবন্ধনগুলো যে কেউ সম্পাদনা করার ক্ষমতা রাখেন। এবং ভুল সম্পাদনা করলে সেক্ষেত্রে সম্পাদনাকারীর কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই।
তাই অধিকাংশক্ষেত্রে সে তথ্যগুলোতে ভুল থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে উইকিপিডিয়ায় চিকিৎসা সংক্রান্ত দশটি আর্টিকেলের মধ্যে নয়টি রোগের আর্টিকেলের কোন আপডেট নেই। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনারী ধমনী রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডিপ্রেশন, অস্টিওআর্থারাইটিস, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং ব্যাক পেইন।
৩. সার্চ ফলাফল আপনার উদ্বেগের কারণ হতে পারে
কিছুদিন আগে আমার একজন আত্মীয় আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন, তিনি এমন কিছু লক্ষণের সম্মুখীন হচ্ছেন তাই তিনি ইন্টারনেটে সেই লক্ষণগুলো লিখে সার্চ দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, সেই লক্ষণগুলো মরণব্যধি ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তবে কি সত্যিই এমন কিছু হতে পারে। তিনি আরো জানালেন আমি এ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগছি।
আমাদের অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে রোগের লক্ষণ সার্চ দিয়ে নিজেকে দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলেন আর তার প্রভাব পড়ে সেসব ব্যক্তিদের নিত্যদিনের কাজকর্মে। এমন অবস্থাকে মেডিকেল সায়েন্সে বলা হয়ে থাকে ‘সাইবারকোন্ড্রিয়া’।
আমাদের জানা উচিত অনেক সাধারণ রোগের লক্ষণগুলোর সাথে অনেক মরণব্যধি রোগের মিল রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আপনার রোগ নির্ণয়ে দরকার হয় মেডিকেল অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার। তাই ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে নিজের মনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে শুধু নিজেকেই কষ্ট দিতে পারেন অন্যকোনো লাভ নেই।
৪. ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে ওষুধ সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি
বিভিন্ন সময় আমরা অনেকেই আমাদের রোগের লক্ষণগুলো মিলে গেলে সে অনুযায়ী সেখানে দেয়া ওষুধ ফার্মেসি থেকে নিয়ে এসে নিজের চিকিৎসা নিজেই করে থাকি। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। প্রকাশ থাকে যে প্রায় প্রতিটি ওষুধের সাইড অ্যাফেক্ট রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একটি ওষুধের সাইড অ্যাফেক্ট কমাতে অন্য একটি ওষুধ সাজেষ্ট করে থাকেন সেক্ষেত্রে অনলাইনের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা নিলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
৫. অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ
ইন্টারনেটে অনেক সাইট রয়েছে যে সাইটগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে তাদের নিজেদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষ পণ্য কিনতে আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন।
তাই পরামর্শ হচ্ছে আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন তবে দ্রুত চেষ্টা করা উচিত আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করলে অনেকক্ষেত্রে আপনাকে অতিরঞ্জিত অথবা ভুল তথ্য দিতে পারে আর যা আপনার অতিরিক্ত বিষন্ন ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, (এমডি) ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান