সিনেমার জনপ্রিয়তায় পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী , সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক-গায়িকাদের অবদানকে সকলে মনে রাখেন। কিন্তু সিনেমা তৈরির নেপথ্যে যে বিশাল বাহিনীর পরিশ্রম ও মেধা কাজ করে সিনেমাকে দর্শকের সামনে হাজির করতে তাদের কেউ মনে করে না। দেয়নি কেউ স্বীকৃতিও। সিনেমার সেই নেপথ্য সেনাদের ভূমিকার কথাই অমিতাভ বচ্চন ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষনে বিস্তারিত তুলে ধরলেন। শনিবার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করে অমিতাভ বচ্চন শুরুতেই বাংলায় ভাষন দেন। এর আগে অনুষ্ঠানে প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ফুল ছড়িয়ে উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলিউড অভিনেত্রী ওয়াহিদা রহমান অভিযান ছবির কথা উল্লেখ করে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন। জয়া বচ্চন বেশি কথা না বলে শুধু বলেছেন, আপনারা এত গুণী লোক সামনে বসে আছেন, কী বলব? এই রেসপেন্সিবিলিটা আমি আমার কর্তাকে দিয়ে দিলাম। উনি বলবেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ১০০ বছরের বাংলা সিনেমার যে আয়োজন এখানে দেখলাম, তাতে আমি মুগ্ধ।
আমাদের পূর্বসুরীদের স্মরণ করছি। যাঁদের আত্মত্যাগে এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। শাহরুখ খান অনুযোগের সুরে বলেছেন, এত বছরের কেরিয়ার, অথচ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কখনও তাঁর কোনও ছবি মনোনীত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষনে বাংলা সিনেমার জন্য গর্ভ করার কথা জানিয়ে বলেছেন, উপযুক্ত সমর্থন পেলে বাংলা সিনেমা প্রতিভার দিক থেকে হলিউডকেও হারিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বলিউড, টালিউডের এক ঝাঁক তারকা। ছিলেন ওয়াহিদা রহমান, জয়া বচ্চন, মহেশ ভাট, শাহরুখ খান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নন্দিতা দাশ প্রমুখ। উপস্থিত মাজিদ মাজিদি, বিলকক-এর মত পরিচালকরাও। শুরুতে বাংলা সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন উস্তাত রশীদ খান, বিক্রম ঘোষ, তেজেন্দ্রনারায়ন মজুমদার, রূপঙ্কর বাগচি, উষা উত্থুপ ও লোপামুদ্রা মিত্র।
উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া সলিল ব্যানার্জি পরিচালিত উত্তম কুমার ও তনুজা অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ দিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই প্রকাশিত হয়েছে বাংলা সিনেমার ডিরেক্টরি। যেখানে রয়েছে ১৯১৭ থেকে ২০১৭ পযন্ত মুক্তি পাওয়া সমস্ত বাংলা ছবির বিশদ বিবরণ। এ বছরের উৎসবে বাংলা সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেখানো হবে অরুণ রায়ের হীরালাল সেন ছবিটি। এছাড়া সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে হবে স্পেশ্যাল ট্রিবিউট। দেখানো হবে তাঁর অভিনীত মেঘে ঢাকা তারা। এছাড়া দেখানো হবে ১৪টি কালজয়ী বাংলা ছবি। যার মধ্যে থাকছে উদয়ের পথে, মুক্তি, উত্তর ফালগুনী, চোখ, স্ত্রীর পত্র, সপ্তপদী, পদ্মানদীর মাঝি, কোনি, কাবুলিওয়ালা, গঙ্গা, গণদেবতা, আলিবাবা ও উনিশে এপ্রিল। আর বেঙ্গলি প্যানোরামায় থাকছে অসুখওয়ালা, ওয়াচমেকার, আই দ্য আদার্স, বিসর্গ ও অন্দরকাহিনী। থাকছে বিমল রায় পরিচালিত ছবি পহেলা আদমি, মা, দো বিঘা জমিন ও সুজাতা। স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে থাকছে সঞ্জয় নাগের ছবি ইয়োর্স ট্রুলি ও আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তর জোনাকি। থাকছে সুজিত সরকারের ছবি অক্টোবর। এবারের উৎসবে দেখানো হচ্ছে সর্ববৃহৎ সংখ্যক চলচ্চিত্র। মোট ৭০ টি দেশের ১৭১টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে শহরের ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে। এছাড়া দেখানো হবে ১৫০টি স্বল্প দৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্র। তবে এ বছরের উৎসবে মূল বিভাগে বাংলাদেশের কোনও পূর্ণ দৈর্ঘ্যরে ছবিকে জায়গা দেয়া হয়নি। শেষ মুহূর্তে অবশ্য দুটি বাংলাদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিকে জায়গা দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে বলা হয়েছে। তবে উৎসবের অফিসিয়াল তালিকায় কোনও বাংলাদেশের ছবি নেই বলেই জানা গেছে।