× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাকা-১৩ /ভোটের আগেই রক্তপাত

দেশ বিদেশ

রোকনুজ্জামান পিয়াস
১৪ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার

মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর-এই তিন থানা নিয়ে ঢাকার নির্বাচনী আসন-১৩। জাতীয় সংসদের ১৮৬ নং আসন এটি। সিটি করপোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ড এই নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
এ নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেয়াল, ল্যাম্প পোস্ট ছেঁয়ে গেছে ব্যানার ফেস্টুনে। একটি দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক ব্যক্তির ছবি সংবলতি ফেস্টুন দেখা গেছে। সবই সরকারদলীয়। এ এলাকার কোথাও কোথাও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরও পোস্টার চোখে পড়েছে। তবে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে এখনো তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা বা ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়নি। যদিও দলীয় মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে শোডাউনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও হামলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এ আসনে।
এরপর থেকে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থীর বিরোধের বিষয়টি আলোচনায়।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বছিলা সংযোগ সড়কের একটি টং চায়ের দোকানে দেখা যায়, চায়ের চুমুকের সঙ্গে চলছে নির্বাচনী আলাপ। এদের একপক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে, অপরপক্ষ বলছে, এবার মানুষের সকল আশঙ্কা দূর করে বর্তমান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দেবে। যদি তাদের ভরাডুবি হয়, তারপরও। কিন্তু আগের পক্ষ এ যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের মতে, নির্বাচনের এখনো একমাসেরও বেশি বাকি। এরই মধ্যে যেভাবে বিরোধীপক্ষের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে তাতে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা যায় না। আরেকটু এগিয়ে এসে এক হার্ডওয়ারের দোকানের ভেতরে দেখা যায়, ৫-৬ জন বসে একই আলাপ করছেন। তাদেরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সুষ্ঠু নির্বাচন। তাদের মধ্যে ২ জন তরুণ ছিলেন, যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ধরে নবোদয় হাইজিংয়ের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, প্রার্থীদের পোস্টারের ছড়াছড়ি। ওই এলাকার আওয়ামী লীগ অফিস ও আশেপাশে দলীয় নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। তবে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি। এমনই একজন জাকির হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কয়েক কদম দূরেই চায়ের দোকান দিয়েছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলেন, এসব বড় মানুষের কারবার। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। নির্বাচন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, সুযোগ পাইলে ভোট দিতে যাবেন, আর যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তো যাবেন না। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকায় তাজমহল রোডের একটি চশমার দোকানে নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা হয়। ওই দোকানে কর্মরত একজন বলেন, কিছুদিন পরপরই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জানান দিয়ে যান, সামনে নির্বাচন। ওই জানানোর ধরন অনেকটা হুমকি প্রকৃতির। অন্য কোনো দলের লোকজন আসেন কিনা জানতে চাইলে বলেন না, এখনো কেউ আসেননি। তিনি বলেন, আসবেই বা কি করে। তারা তো এখন গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই চশমা ব্যবসায়ী বলেন, বিকালের পর মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগেরই কেবল শোডাউন হয়। অন্যদেরকে এখনো দেখা যায়নি। তিনি বলেন, সরকার তো ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, নিরপেক্ষ নির্বাচনও চায় না। সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতো। তিনি আরো জানান, তিনি এই আসনের ভোটার না। ঢাকার বাইরের ভোটার। যদি পরিবেশ ভালো দেখেন, তবেই বাড়িতে যাবেন ভোট দিতে। শেষে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বললাম। জানিনা আপনি কি করেন। তবে বাইরে বইলেন না।
এই দোকানের ঠিক উল্টো পাশে রাস্তার ধারে আলমগীরের চায়ের দোকান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শোডাউন হয়। বিএনপি এখনো শুরু করেনি। তবে তিনি বলেন, তারাও বসে নেই। ভেতরে ভেতরে  তাদের প্রস্তুতি চলছে। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরই তারা মাঠে নামবে বলে তার ধারণা। আর একটু এগিয়ে গিয়েই আদাবর যুবলীগের অফিস। বেলা ১টার দিকে ওই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ৫-৭ জন যুবক আড্ডা দিচ্ছেন।
জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় কথা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবিএম ব্রাইট হাসান। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অনুকূল নীতি প্রণয়ন ও দমন নিপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার সংস্কৃতিতে নির্দলীয় সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। পাশাপাশি   ভোটাধিকারের মাধ্যমে ক্ষমতাকে জনগণের মাঝে বিলিয়ে না দিতে পারলে গণতন্ত্রের পুনর্মৃত্যু ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনটা সব সময়ই আমাদের দেশে উৎসবের। জনগণকে দেশের মালিক বলা হলেও তারা মূলত: ওই একটা দিনই ক্ষমতা চর্চার সুযোগ পান, তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্বটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ভোট উৎসবটা একপক্ষের হয়ে গেছে। এখনো সর্বজনীন হয়নি। সর্বজনীন উৎসবে পরিণত করতে হলে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগবে। তিনি এই অবস্থাকে ক্রান্তিকাল হিসেবে অভিহিত করেন। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের একটি অংশ ও মিডিয়ার ভূমিকায় তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে তাদের ভূমিকা অনেকটা দলীয় নেতাকর্মীদের মতো। দলমতের ঊর্ধ্বে  ওঠে তারা সঠিক ভূমিকা পালন করছেন না।
জানা গেছে, এ আসনে (ঢাকা-১৩) বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে তার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আরেক নেতা হাজী মকবুল হোসেন। এ ছাড়া রয়েছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানও। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন, দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম। এ ছাড়া সোমবার সকালে কায়াস মাহমুদের পক্ষ থেকে তার বাবা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর