× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যৌন আসক্তি ও একজন নীলার স্বীকারোক্তি- প্রথম পর্ব

বিশ্বজমিন

সঙ্গীতা মিসকা
(৫ বছর আগে) নভেম্বর ১৪, ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

মধ্য এশিয়ায় ১৫ বছর কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে নীলার প্রথম চাকরি ছিল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেডিং ফ্লোরে। তার ভাষায়, এই প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের আধিপত্য বেশি, যারা কিনা বোনাসই কামান মিলিয়ন পাউন্ডের অঙ্কে। পুরো দলে মাত্র দু’ জন নারী ছিলেন। একজন নীলা। তাদের পুরুষ সহকর্মীরা প্রায়ই সভাকক্ষের বড় পর্দায় পর্নোগ্রাফি চালিয়ে তাদেরকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করতেন। অথচ, এই বড় পর্দার কাজ হলো বাজারদরের তথ্য প্রদর্শন করা।
নীলা বলেন, ‘আমার এটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমার ক্যারিয়ার সবে শুরু হয়েছে। শহরে মাত্র নিজের জায়গা করে নিচ্ছি।
বেতনও পেতাম ভালো। চাকরিটাও আকর্ষণীয়। আমি এই চাকরি হারাতে চাই নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতাম অফিসের পুরুষরা আমার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আশা করতেন। তারা আমাকে বিস্মিত করে দিতে চাইতো। পর্নো দেখে যাতে হতভম্ব না হই, সেজন্য আমি বাসায় ফিরে নিজেই পর্নো ভিডিও দেখতে শুরু করলাম। যাতে করে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। অফিসের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারি।’
কিন্তু খুব দ্রুতই নীলা পটে গেলেন। সামাজিকভাবে রক্ষণশীল আবহে তার বড় হয়ে উঠা। তার পরিবারে যৌনতা নিয়ে কখনই আলোচনা হয় নি। ফলে ওই পরিস্থিতিতে ‘অসহায়’ হয়ে পড়েন তিনি।
প্রতিদিনই তিনি ভাবতে থাকেন বাসায় কত দ্রুত যাবেন। গিয়ে পর্নো ভিডিও দেখবেন আর সেক্স টয় নিয়ে স্বমেহন করবেন।
তার ভাষায় প্রক্রিয়াটা এমন: ‘প্রথমে বেশ ধীরে শুরু হয়। আপনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এরপর আপনি দেখতে থাকবেন। পাশাপাশি নিজের সরঞ্জাম নেওয়া শুরু করবেন। এমন উত্তেজনাকর কিছু দেখে আপনার সকল অনুভূতি বেশ তীব্র হয়ে উঠবে। আপনার মন চলে গেল হাতের দিকে। ওই যন্ত্রের বাটন না চাপলে শান্তি হবে না। আপনি জানেন যে, আপনিই এটার নিয়ন্ত্রণে আছেন। আপনার সুখানুভূতির নিয়ন্ত্রণে। আর এটার মাধ্যমে যে ধরণের অরগাজম হবে, তা অন্য কোনো মানুষের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বমেহন শুরু ও শেষ হতে বড়জোর ৫ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু আপনি এরপর লেগে থাকবেন এতে। কারণ, এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে আপনি বেরোতে চান না। এটা যেন নেশার মতো।’
এই পদ্ধতিতে তিনি সপ্তাহের প্রতিটি দিন গড়ে ২-৩ ঘণ্টা করে পর্নো দেখতেন। তার ব্যবহার ক্রমেই পীড়নকর হয়ে উঠলো। তিনি যদি পর্নো দেখতে না পারতেন, তাহলে মন আকুল হয়ে উঠতো। পুরো বিষয়টি তার জন্য যতই ক্ষতিকর হচ্ছিল, ততই তিনি বিষয়টির পক্ষে নিজের মনকে বোঝাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতেন। তিনি নিজেকে নিজে বলতেন, ‘পুরো বিষয়টি নিরাপদ। পর্নো দেখে আপনার যৌন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপনার এত কষ্ট করে মেইক আপ করতে হবে না। আপনার শর্তানুযায়ীই সব হবে, কিন্তু ফলাফল একেবারে শতভাগ নিশ্চিত।’
কিন্তু এই শতভাগ নিশ্চিত ফল পেতে তার পর্নো দেখার অভ্যাস ক্রমেই বাজে হয়ে উঠলো। তিনি ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর পর্নো দেখতে লাগলেন। তার ভাষ্য, ‘প্রথম প্রথম আপনি হয়তো সাধারণ পর্নো দেখবেন। কিন্তু কয়েকদিন পর এটাতে আর কাজ হবে না। আপনি এ ধরণের পর্নোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এটা যেন মাদক সেবনের মতো। ডোজ বাড়াতে হবে আপনাকে। ফলে আপনি আরও কড়া ধাঁচের পর্নো দেখতে থাকবেন।’
নীলার কাছে এক পর্যায়ে বিষয়টি বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠলো। তিনি নিজেই চিন্তিত হয়ে উঠলেন, তিনি কি তাহলে বিকৃত মস্তিষ্কের কেউ!
যারাই নিজেকে যৌন আসক্ত মনে করেন তাদের এই মনোভাবের পেছনে এই লজ্জা একটি বড় কারণ। এই লজ্জাবোধের কারণে নিজেদেরকে যেমন আড়াল করে ফেলতে ইচ্ছা করে, তেমনি ওই তাড়নাও আরও জাগ্রত হয়ে উঠে। নীলার ভাষায়, ‘এ যেন উত্তেজিত হওয়া ও লজ্জার সংমিশ্রণ।’
পর্নো দেখার ফলে পুরুষের প্রতিও নীলার আচরণ পরিবর্তিত হয়ে উঠলো। অর্থাৎ, তিনি যখন সম্ভাব্য সঙ্গী খুঁজতেন, তখন তাদের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলো। তিনি বলেন, ‘আমি যেন লোকটার শার্টের ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম তার শরীরটা সিক্স-প্যাক কিনা। যুক্তরাজ্যের পুরুষদের গোপনাঙ্গের যে গড় আকার, তা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু এটা তো জীবনসঙ্গী বাছার ভালো কোনো উপায় নয়।’ এ কারণে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে।
একসময় নীলা আবিষ্কার করলেন, আগের কোনো ধরণেরই পর্নো ফিল্ম তাকে আকৃষ্ট করে না। তিনি এখন উত্তেজিত হওয়ার জন্য সেসব ছবি দেখতে বাধ্য হচ্ছেন যেখানে নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করা হয়। এই বিষয়টি ভেবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে উঠেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম, এরপর আমি আর কত নিচে নামবো? আমি কি এরপর মানুষ খুনের ভিডিও দেখবো আমার আসক্তি কাটানোর জন্য?’
নীলা এরপর লন্ডন ছেড়ে যান। তিনি নিজেকে একজন মানসিক পরামর্শদাতা হিসেবে প্রশিক্ষিত করে তোলেন। বর্তমানে তার বয়স চল্লিশের কোটায়।
যেসব রোগী নিজেকে যৌন আসক্ত বলে মনে করেন তাদের চিকিৎসায় তিনি অভিজ্ঞ। মধ্য লন্ডনের লরেল সেন্টারে তিনি কাজ করেন। যুক্তরাজ্যে অল্প যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরণের বিশেষ চিকিৎসা সেবা দেয় তার মধ্যে এটি একটি।
কিন্তু এই চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে মোটা অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে। কারণ, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ যৌন আসক্তিকে রোগ হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয় না। তবে অনুমান করা হয় যে, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর হাজার হাজার না হলেও শ’ শ’ রোগী এই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের বড় অংশই পুরুষ।
(এই নিবন্ধটি বিবিসি থেকে নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে সমাপ্য।)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর