সিলেটে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন প্রবাসীরা। প্রায় একডজন প্রবাসী প্রার্থী ইতিমধ্যে দেশে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন। তাদের ঘিরে আলাদা আমেজ তৈরি হয়েছে সিলেটের রাজনীতিতে। এসব প্রার্থীর কেউ কেউ সাড়াও ফেলেছেন ভোটের মাঠে। প্রায় ১০ বছর পর সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরাণায় প্রার্থী হতে প্রবাসীদের আগ্রহ বেশি। এ কারণে এ দুটি দল থেকে বেশি সংখ্যক প্রবাসী মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে- সিলেটে জাতীয়পার্টি থেকেও প্রার্থী হতে প্রবাসীদের আগ্রহের কমতি নেই।
গত সংসদ নির্বাচনেও সিলেটের দুটি আসন থেকে দুই জন প্রবাসী এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এরা হচ্ছেন, সিলেট-২ আসনে জাতীয়পার্টির এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া, সিলেট-৫ আসনে সেলিম উদ্দিন। এর আগের সংসদেও ছিল প্রবাসীদের প্রতিনিধি। সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার আরো অধিক সংখ্যক প্রার্থী হতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। প্রবাসী প্রার্থীদের মতে- সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের নিয়ে ভিন্নমাত্রার কৌতূহল রয়েছে। এসব প্রবাসী প্রার্থীরা নানা সময় দেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে তাদের প্রতি আস্থা রয়েছে মানুষের। এ কারণেই বারবার সিলেট থেকে প্রবাসী প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাচ্ছেন বলে মনে করেন তারা।
প্রবাসী প্রার্থীদের আধিক্য বেশি সিলেট-২ আসনে। এ আসনে গত দুই দফা সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন প্রবাসীরা। ফলে এ আসনে প্রায় সব দলেই আছেন প্রবাসী প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে ইতিমধ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে মুল্লযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে শোডাউনে সরব ছিল ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ এলাকা। আওয়ামী লীগ থেকে এই দুই জনের মধ্যে যেকোনো একজন এবার দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। এ আসনের বর্তমান এমপি হচ্ছেন প্রবাসী ও জাতীয়পার্টির ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনিও জাতীয়পার্টি থেকে এ আসনে এবার প্রার্থী হচ্ছেন। মহাজোট হলে গত নির্বাচনের মতো তিনজন থেকে একজন প্রবাসী পাবেন এ আসনের মনোনয়ন।
সিলেট-৩ আসনেও এবার প্রবাসী প্রার্থী বেশি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে রয়েছেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও লেখক গবেষক মনির আহমদ। তারা দুই জন গত সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়নের আশায় দীর্ঘ দিন ধরে দেশে অবস্থান করছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। আর মনির আহমদ সম্প্রতি লন্ডন থেকে এসে সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন। এ আসনে জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ আতিকুর রহমান আতিকও একজন প্রবাসী। বিএনপি থেকে এ আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম। তিনি ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে এসেছেন ওখানকার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। সম্প্রতি তিনি দেশে এসে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। এ আসনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আরেক প্রবাসী প্রার্থী। ওই প্রবাসী প্রার্থী হলেন জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান। বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমানে লন্ডনে থাকা সিলেটের শীর্ষ নেতা এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করে সেটি জমাও দেয়া হয়েছে।
সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন প্রবাসী নেতা। তিনি হলেন জাতীয়পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন। এবারও তিনি জাতীয়পার্টির কাছে এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছেন। তার সঙ্গে দলের ভেতরেই মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন আরো দুই প্রবাসী নেতা। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রবাসী নেতা জাকির হোসেন ও ফ্রান্স প্রবাসী আলহাজ শাব্বির আহমদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুদ্দিন। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে প্রার্থী হতে চান আরেক প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুমিন চৌধুরী।
সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান কানাডা আওয়ামী লীগের সাবকে সভাপতি সরওয়ার হোসেন। তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারাভোগ করেছেন। এরপর থেকে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। বিএনপি থেকে এখানে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন শিল্পপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী। এই দুই প্রবাসী নেতা দুটি উপজেলার তৃণমূল পর্যন্ত নিজেদের অর্থায়নে উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সরওয়ার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রবাসীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে নানাভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। যখনই দেশে দুর্দিন ঘনীভূত হয় তখনই প্রবাসীরা ছুটে আসেন দেশে। প্রবাসী প্রতিনিধি সংসদে থাকলে প্রবাসীদের সুখ দুঃখ শেয়ার করার মানুষ মিলে। এ কারণে প্রবাসীরাই সংসদে তাদের জনপ্রতিনিধি চান। সিলেট-২ আসনের প্রার্থী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন- আমরা প্রবাসে থাকলেও দেশের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত। আগেও প্রবাসীরা সংসদে ছিলেন। এবারও উৎসবমুখোর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে প্রবাসী প্রার্থীরা বেশি এসেছেন। যোগ্য প্রার্থীরা সংসদে গেলে বিদেশের মাটিতে তারা দেশকে আরো উজ্জ্বল করতে পারবে বলে জানান তিনি।