× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেট-৩ /কয়েসকে টক্কর দিতে মাঠে শফি ও সালাম

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৬ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার

সিলেট-৩ আসনে দলের অভ্যন্তরে প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে কোন্দল থাকলেও বর্তমান এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের ওপর ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকদের কাছ থেকে ছাড় পেলে কয়েসই হতে যাচ্ছেন এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী। এমন আভাস দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আর বিএনপিতেও এ আসনের প্রার্থিতা নিয়ে চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের হিসাব-নিকাশ। সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার এমএ সালামকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে হাইকমান্ড। অতীতের নানা ঘটনায় ভোটের মাঠে কিছুটা আলোচিত শফি চৌধুরী। এ কারণে এই আসনে নতুন নেতৃত্ব হিসেবে ব্যারিস্টার সালামের সম্ভাবনা বেশি। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী যে-ই হোক তার পক্ষে জনসমর্থন বেশি থাকবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

সিলেট-৩ আসনটিতে নতুন করে বালাগঞ্জ উপজেলা সংযুক্ত হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এ আসনের যুক্ত হওয়ায় বিএনপির ভোট বেড়েছে। এই উপজেলায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা সরকার বিরোধী জোটের। পাশাপাশি ৭ ইউনিয়নের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরাও বিএনপি সমর্থিত। এর বাইরে দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলাতেও বিএনপির বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ আসনে বর্তমানে ভোটার হচ্ছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ জন। ২০১৪ সালে এ আসনে কোনো ভোট হয়নি। ২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস পেয়েছিলেন ৯৭ হাজার ৫৯৩টি। তার চেয়ে প্রায় ৪৩ হাজার কম ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। মহাজোটের জাতীয় পার্টি ও ২০ দলীয় জোটের ভেতরে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের ভোট ব্যাংক রয়েছে এ আসনে।
সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন প্রায় ১০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতা আবু জাহিদ, ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, সিলেট আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রুহেল, লেখক-সাহিত্যিক মনির আহমদ ও এ আর সেলিম। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দলীয় অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদের সঙ্গে স্থানীয় এমপি মাহমুদ উস সামাদের বিরোধ তুঙ্গে। এ কারণে উপজেলার উন্নয়নেও ব্যাঘাত ঘটেছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ২০০৮ সাল থেকে রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তার পক্ষে এমপির বিদ্রোহী অংশের যোগাযোগ বেশি। আর নিজ এলাকা হওয়ার কারণে এখানে নিজের মনোনয়ন চাচ্ছেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও। একসঙ্গে ১০ জন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় এই আসনে বর্তমান এমপির একক কর্তৃত্ব নেই। ২০১৪ সালে তার সঙ্গে কেউ বিরোধিতা না করলেও ঠিক ৫ বছরে পাল্টে গেছে এই দৃশ্যপট। এরপরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উপর ভর করে এই আসনে বর্তমান এমপি মাহমুদ উস সামাদের উপর ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ। তিনি পেতে যাচ্ছেন এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন- এমনটি জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, ০এ আসনের নেতাকর্মীরা পরিবর্তন চায়। এ কারণে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবেন তার পক্ষে থাকবে সবাই। তিনি বলেন, প্রার্থী মুখ্য নয়, এবার মার্কার পক্ষে আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
সিলেট-৩ আসনে বিএনপিতেও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এ আসনে চারজন বিএনপি নেতা দলের হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। এরা হলেন- সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক ও যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুর কাইয়ূম চৌধুরী। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ-উপগ্রুপ থাকলেও বিএনপিতে তেমনটি নেই। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন- যাকে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে সবাই একাট্টা হয়ে মাঠে নামবে। বিএনপি এ আসনে তাদের হারানো দুর্গ ফিরে পেতে একযোগে সবাই কাজ করবে। আর জামায়াতে ইসলামীসহ শরিকদলের নেতারাও তাদের সঙ্গে একাট্টা রয়েছেন। শফি আহমদ চৌধুরী এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি হলেও এলাকার রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নয়। ঢাকায় বসবাস করেন বেশি। পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততায় তিনি বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। এর কারণ- নির্বাচন এলেই তিনি ভোটে নামেন। আর নির্বাচন ছাড়া অন্য সময় তাকে পাওয়া যায় না। ফলে দলের নেতাদের দুর্দিনে কিংবা আন্দোলনে সংগ্রামে সম্পৃক্ততা কম থাকায় তার ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি নানা সময় নানা ঘটনায় তিনি আলোচিতও হয়েছেন। অপরদিকে- বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম এ আসনের নতুন মুখ হলেও তিনি ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তবে- যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে তার সঙ্গে এলাকার দলীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। নতুন করে কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। ব্যারিস্টার সালামের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এলাকায়। এই গ্রহণযোগ্যতাকে পুঁজি করে নির্বাচনী মাঠে তিনি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে- শেষ পর্যন্ত এ আসনে মনোনয়নের আশা ছাড়ছেন না চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক ও যুবদলের সাবেক নেতা আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। তারাও জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক জানিয়েছেন- বিএনপি বড় দল হওয়ার কারণে এখানে প্রার্থী বেশি। কিন্তু দলের ভেতরে কোন্দল নেই। একক প্রার্থী দেয়ার পরপরই বদলে যাবে সব। বিএনপির সবাই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে একসঙ্গে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। জয় ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত সবাই মাঠে সক্রিয় থাকবেন বলে জানান তিনি। এদিকে- বিএনপির কাছে শরিক দল খেলাফত মজলিসও চায় আসনটি। মাদরাসা কেন্দ্রিক ভোট থাকায় খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার যুগ্ম সম্পাদক মো. দিলওয়ার হোসেন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ইতিমধ্যে দিলোয়ার খেলাফত মজলিস থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। জোটের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের আলোচনা চলছে বলে জানান দিলোয়ার হোসেন। তবে- জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর