× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘বুকে রাইফেল ঠেকালেও এত দুঃখ পেতাম না’

বাংলারজমিন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১১ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার

বুকে রাইফেল ঠেকিয়ে ধরলেও এত দুঃখ পেতাম না। কিন্তু ‘জামায়াত’ সম্বোধন করায় অনেক দুঃখ পেয়েছি। গতকাল সিলেটের কুয়ারপাড়ে শামীম আহমদ কাঁদো কাঁদো গলায় এ কথাগুলো বলছিলেন। আগের সারা রাত তিনি ঘুমাতে পারেন নি। সিলেটের পুলিশ তাকে ঘুমাতে দেয় নি। জামায়াত কর্মী দাবি করে পুলিশ তাকে ধরতে গিয়েছিল বাড়িতে। রাতে অনেক ঘটনার পর তাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। কিন্তু পুলিশের আচরণের কারণে ঘুম হয়নি শামীমের।
আক্ষেপ করে বললেন- ‘মা-বাবা দুজনই দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আর এখন পুলিশ আমাকে ‘জামায়াতকর্মী’ বলে ধরে নিয়ে যেতে বাসায় যায়। এ দুঃখ কার কাছে বলি।’  শামীম হচ্ছেন একাত্তরে শহীদ আব্দুল করিম ও লাল বানুর ছোট ছেলে। তারা এখন নগরীর কুয়ারপাড়ের ৫০ নম্বর বাসার বাসিন্দা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নগরীর সুবহানীঘাটে। শামীম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী তিনি। এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে শামীমের। বড় ভাই হোসেন মিয়াকে নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও নন তিনি। কখনো রাজনীতি করেন নি। ব্যবসায়ী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত তিনি। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাস করেন কুয়ারপাড়ের বাসাতেই।
 রোববার রাত তখনও একটা হয়নি। এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। দরোজা খুলেই দেখেন প্রায় ২০ জনের মতো পুলিশ। এর মধ্যে ৪-৫ জন সাব-ইন্সপেক্টর। শামীম আহমদকে তারা প্রধান ফটক খোলার নির্দেশ দিলে শামীম খুলে দেন। এমন সময় পুলিশ কর্মকর্তা বলে উঠেন- ‘আপনাকে ওসি সাহেব ডেকেছেন। আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে।’ আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ে শামীমের মাথায়। তিনি বলেন, ‘ভাই আমি রাজনীতি করি না। কখনোই করি নি। আমি একজন ব্যবসায়ী। এর বেশি কিছু না। ঘরে আমার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তাদের রেখে থানায় এখন যেতে পারবো না। প্রয়োজন হলে সকালে আমি গিয়ে দেখা করবো।’ কিন্তু পুলিশ নাছোড়বান্দা। থানায় যেতে হবেই। কিন্তু শামীম যাবেন না। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। এ সময় তর্ক শুনে দু’তলা থেকে সন্তানকে নিয়ে নিচে আসেন শামীমের স্ত্রী। আশেপাশের লোকজনও এগিয়ে আসেন। একবাক্যে সবাই শামীমকে ভালো মানুষ বলে আখ্যায়িত করলেও পুলিশ সেটি মানতে নারাজ। এক পর্যায়ে পুলিশের এক এসআই শামীমকে বলেন- ‘আপনি জামায়াত করেন। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এ কারণে ওসি সাহেব যেতে বলেছেন।’ এ খবর শুনে রাতেই তার বাসায় ছুটে আসেন স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ঝলক ও একই এলাকার বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিলেট জেলার সভাপতি আফসার আজিজ। তারা দুই জন এসে পুলিশকে বলেন- ‘শামীম শহীদ পরিবারের সন্তান। তার পরিবারের কেউ জামায়াত করে না।’ এ সময় তারা মোবাইল ফোনে কোতোয়ালি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেন। প্রমাণস্বরূপ তারা ওসির কাছে  হোয়াটসআপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দেয়া শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির সার্টিফিকেট পাঠান। অনেক আলোচনার পর রাত সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ অবশেষে শামীমের বাসা থেকে চলে যায়। এমন ঘটনায় হতবাক হয়েছেন নগরীর কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর