নিউমার্কেটের বিপরীত। বলাকা সিনেমা হলের সামনে। এক যুবককে দেখলাম মেয়েদের কানের দুল, চুড়ি, চুলের ক্লিপসহ আরো অনেক কিছু ছোট একটা টেবিলে সাজিয়ে পাশে বসে আছে। মাঝে মাঝেই তাকে দেখি এ এলাকায় এলে। কয়েকটা মেয়েকে দেখলাম কানের দুল দেখছে সেখানে। শীতের রোদ হলেও তাপটা বেশ কড়াই। যুবকটার পাশে দাঁড়ালাম। মেয়ে ক্রেতাগুলো চলে গেলে যুবকটা বিক্রির টাকাগুলো মানিব্যাগে সাজিয়ে রেখে ছোট টুলে বসলো।
মাথায় রুমাল দিলো।
আশপাশ তাকালো। এবার টেবিলের নিচ থেকে একটা বই বের করলো। একাউন্টিং এর বই।
পকেট থেকে কলম বের করে বইটার ভেতর কিছু লাইন দাগ দিয়ে পড়া শুরু করলো। যখনি কোনো ক্রেতা সামনে আসে সে বইটা দ্রুত টেবিলের নিচে রেখে দাঁড়িয়ে যায়। খুব ভালো করে খেয়াল করলাম, যখনই সে একটু অবসর পাচ্ছে বই বের করে পড়ছে। মাথার রুমাল টেনে নিচ্ছে একটু পরপর। ঘাম মুছছে।
তার নড়াচড়া, মুভমেন্ট, বই পড়া দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না সে লোক দেখানো পড়া পড়ছে। কারণ সে খুব চেষ্টা করছে বইটা গোপন রাখার। গরমে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। চলে আসার সময় আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, ভাই কিসে পড়েন? যুবকটা তাকালো না, না শোনার ভান করলো। আবারো বললাম, কিসে পড়েন। সে উত্তর দিলো- না, পড়ি না। এই জাস্ট বইটা দেখছিলাম। এখানেই ছিল তো!
বুঝলাম সে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে। বললাম, অনার্স না কী মাস্টার্স? সে এবার ধীরে বলল- অনার্স ফাইনাল ইয়ার। বলেই সামনে আসতে থাকা ক্রেতার দিকে তাকালো।
চলে এলাম সেখান থেকে। ইচ্ছে করছিল তার বৃত্তান্ত জানতে। কিন্তু প্রশ্ন করে তার ব্যবসার মূল্যবান সময় নষ্ট না করাই উত্তম। এমন সংগ্রামী যুবক এ শহরে অনেক আছে।
যারা কারও দয়ার অপেক্ষায় থাকে না। যারা কারও কাছে হাত পাততে চায় না। তারা চায় জীবনটাকে যতদূর পারা যায় ভালো রাখতে, সাজিয়ে গুছিয়ে তুলতে। এরা থেমে থাকে না। এরাই তো অলিতে গলিতে লুকিয়ে থাকা হিরো। যারা সাতে নেই পাঁচেও নেই। যাদের নেই কোনো অভিযোগ। এরা জানে শুধুই সংগ্রাম করতে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো এমন স্বনির্ভর যুবকদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে বহুগুণ।