বড়লেখার নালিখাই পানপুঞ্জির তিন আদিবাসী পরিবারের বসতঘর রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কেটে ফেলেছে জুমের ৪ শতাধিক পান গাছ। খাসিয়াদের দাবি ছোটলেখা চা বাগান তাদের উচ্ছেদ করতেই বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। শনিবার রাত দেড়টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ও পানগাছ কাটার এসব ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে খাসিয়াদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সরজমিন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ছোটলেখা চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থে টলবিলামিন নামে এক আদিবাসী খাসিয়াকে বাগানের প্রায় ৮০ একর ভূমির দখল বুঝিয়ে দেয়। এ ভূমিতে টলবিলামিন খাসিয়া ২৮ খাসিয়া পরিবার নিয়ে নালিখাই পানপুঞ্জি নাম দিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন।
সেখানে তারা পান, লেবু, সুপারিসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। খাসিয়ারা যখনই উন্নত বাসস্থান ও যাতায়াতের উদ্যোগ নেয় তখনই বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। খাসিয়া মন্ত্রী (হেডম্যান) টলবিলামিন জানান, রাস্তা নিয়ে বাগানের সঙ্গে সমস্যা চলছে। নিজের বসতঘর পাকা করতে ইট নেয়ার সময় বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বাধা দেয়। গত ১৩ই জানুয়ারি ছোটলেখা বাগানের ম্যানেজারের লোকজন গেটের সামনে ইট আটকে রাখে। রাস্তায় চলাচলে নিষেধ দেয়। ইট পরিবহনকারী শ্রমিকদের মারধর করে উল্টো থানায় আমার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বাগান ম্যানেজারের নানা হুমকি-ধমকির কারণে গত ১ সপ্তাহ ধরে পুঞ্জির লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এরই মাঝে শনিবার রাত দেড়টার দিকে পুঞ্জির বাসিন্দা অচিন পাত্র, এজু চিছাম ও ইনেত মুরংয়ের বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে অন্তত আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কেটে ফেলেছে জুমের শতাধিক পান গাছ। এদিকে, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সভাপতি অধ্যাপক জাহেদ আহমদ জানান, জীবনমান উন্নয়নের কাজে ও রাস্তায় চলাচলে কাউকে বাধা দেয়া উচিত নয়। ছোটলেখা চা বাগান ম্যানেজার মোকাররম হোসেন জানান, নালিখাই পানপুঞ্জির খাসিয়াদের সঙ্গে কিছুদিন ধরে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ঠিকই, তবে তাদের বসতঘর পুড়ানো ও হুমকি-ধামকি দেয়ার সাহস বাগানের কারো নেই। সরকারি জমিতে দালান তৈরির অনুমতি বাগান দিতে পারে না। তাই ইট নিতে বাধা দেই। ঘর পুড়ানো ও হুমকি-ধামকির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা তাদেরই ষড়যন্ত্র। থানার ওসি (তদন্ত) মো. জসীম উদ্দিন রোববার সন্ধ্যায় জানান, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই পুঞ্জিতে যাই। টিনশেডের তিনটি ঘর পুড়েছে। আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’