× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমান, মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

অনলাইন

শাহ্ জামাল, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে
(৫ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯, বুধবার, ২:৫১ পূর্বাহ্ন

খলিলুর রহমান। নিভৃতচারী এক ভাষা সৈনিক। এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। হারিয়ে ফেলেছেন চলাচলের সক্ষমতা। জীবনের শেষ সময়টা এখন তার কাটছে বদ্ধ ঘরে। বিছানাই যেন তার একমাত্র সঙ্গী। ভাষার মাসেও তিনি উপেক্ষিত।
তার কেউ খোঁজখবর আর কেউ নেই না। জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।


১৯৫১ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন খলিলুর রহমান। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনে যখন ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত, তখন তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে তার কণ্ঠেও বজ্রকঠোর আওয়াজ ওঠে রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই। নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সময়ে জগন্নাথ কলেজের একটি ইউনিটের ছাত্রনেতা হিসেবে মিছিল মিটিং এর নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলি চালায়, তখন তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে।


পুলিশের গুলিতে ভাষা শহীদরা গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়ার সেই মিছিলেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। তার চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হন সহপাঠীরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারী মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ খলিলুর রহমান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর সেই দিনটির কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬০ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষা সৈনিক।


২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় পত্রিকা দৈনিক মানবজমিন সহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় ভাষা সৈনিক খলিলুর রহমানের নাম। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। দাবি ওঠে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার। কিন্তু জীবনের  শেষ সময়ে এসে এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মমনা জানিয়েছে, ভেড়ামারার ব্যবসায়ী বণিক সমিতিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।

 
ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমানের পুত্র রুহুল কুদ্দুস আবেগজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার বাবা বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মূল্যয়ন করবে। ভাষাসৈনিক হিসেবে তার বাবার নাম সংযোজিত হবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধি হবে। দীর্ঘদিন ধরে বদ্ধ ঘরেই কাটছে বাবার জীবন। বিছানায় তার এখন একমাত্র সঙ্গী। জীবনের এই শেষ সময়ে এসে তিনি চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

 
এ বিষয়ে কথা হয় ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ এর সঙ্গে। তিনি বলেন,  ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে দাবি ওঠেছে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে তিনি একজন ভাষাসৈনিক হিসেবে তার প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে পারেন। তাহলে হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া সম্ভব হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর