এবারের অমর একুশে বই মেলায় পেন্সিল নামক একটি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এটি মূলত ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ, যার এক লাখের বেশি সদস্য রয়েছে। গ্রুপে কেউ লেখেন আবার কেউ ছবি আঁকেন। এই গ্রুপের লেখকদের বই নিয়েই বই মেলায় স্টল সাজিয়েছে পেন্সিল।
পেন্সিলের এক সদস্য মুরাদ মুস্তাফিজ বিবিসিকে জানান, নতুনদের প্রমোট করার জন্যই পেন্সিল এবার এভাবে চিন্তা করেছে। এবারের মেলায় নতুন লেখা ৪৫টি বই বের করা হয়েছে বলে জনান তিনি। এছাড়াও ফেসবুকের যারা লিখে থাকেন তাদের লেখা নিয়ে একটি সংকলন বের করা হয়েছে। কাগজে লেখা বইয়ের একটি ভিন্ন মাত্রা আছে বলে যুক্তি দেন তিনি। সে কারণেই লেখাগুলো বই আকার দেয়া, জানান তিনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের এক সময়ের নবীন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের লেখা প্রকাশের প্রাথমিক স্থান ছিল লিটল ম্যাগাজিন।
লিটল ম্যাগাজিনকে বলা হয় সাহিত্যিকদের 'আতুর ঘর'।
প্রতিবারের ন্যায় এবারের বই মেলায়ও লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ১৩০ এর বেশি স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু বই মেলার যখন জমজমাট অবস্থা, তখন লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের যেন শূন্যতা।
তবে কি বর্তমান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের যুগে ফেসবুক লিটল ম্যাগাজিনের স্থানটি দখল করে নিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে 'ভিন্নচোখ' নামে একটা প্রকাশনীর প্রকাশক এস এম নকিব বলছিলেন, ফেসবুক কখনই লিটল ম্যাগাজিনের স্থান নিতে পারবে না।
বইয়ের মতো করে ফেসবুকে মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
তার মতে, প্রকৃত অর্থে যারা বই পড়ে তারা বই অবশ্যই কিনবে, যারা ম্যাগাজিন পড় তারা ম্যাগাজিন অবশ্যই কিনবে।
একই ধরনের মত প্রকাশ করেন লেখক নাহার আহমেদ। তার মতে, লিটল ম্যাগাজিনের যে গ্রহণযোগ্যতা এত বছর ধরে তৈরি হয়েছে সেই জায়গা কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিতে পারবে না। ফেসবুক দিয়ে সাহিত্য চর্চা এগিয়ে যেতে পারে না বলেও দাবি করেন তিনি। তার কাছে ফেসবুক রাইটারদের কোনো মূল্য নেই।
তাদের থেকে ভিন্ন মত দিয়েছেন ‘সময় পূর্বপর’ নামক পাক্ষিক ম্যাগাজিনের সুরাইয়া জাহান। অনেকে ফেসবুককেই প্রাধান্য দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এর পেছনে আবার ব্যবসায়িক কারণকে দায়ি করেছেন অনুপ্রাণন প্রকাশনায় কর্মরত ইফফাত আরা খন্দকার। তিনি বলেন, ‘লিটল ম্যাগের বিষয়টা আগে শুধু মননশীলতার বিষয় ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে এটা অনেকটা ব্যবসায়িক হয়ে যাচ্ছে- এটাও একটা কারণ।’
তবে ফেসবুক কোনোভাবেই লিটল ম্যাগাজিনের স্থান দখল করতে পারে বলে মনে করেন না লেখক প্রকাশকরা।
সূত্র: বিবিসি