সাংগঠনিক শক্তি সুদৃঢ় করতে দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতরাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে নেতারা সার্বিক পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, স্কাইপির মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সার্বিক বিষয়ে নেতাদের বক্তব্য শোনেন। নেতারা মনে করছেন- এখন অনেকটাই কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বিএনপির রাজনীতি। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজেদের মেধা, শ্রম ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করার বিষয়টিকে প্রাধান্য ও সে ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে।
বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াত ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
এর বাইরে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নেতারা তাদের পর্যালোচনামূলক মতামত দেন। তবে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, মামলা ও জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, নেতাদের এসব বক্তব্যের সারমর্ম তৈরী করে দুই একদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে একটি সারসংক্ষেপমূলক প্রতিবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সারসংক্ষেপমূলক প্রতিবেদনটি তৈরী করবেন। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সমালোচনা করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো নাকি ভুল ছিলো তা ইতিহাস একদিন বিচার করবে। তবে নির্বাচনে নেয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার ভূমিকা এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রতিক’ল পরিস্থিতিতে তিনি প্রত্যাশিত ভ’মিকা রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, এখন নির্বাচন শেষ। এই নির্বাচনে যা অর্জন হওয়ার তা হয়েছে। তাই এবার ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতির চেয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দলকে গোছাতে হবে। সারাদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। অপর এক নেতা জামায়াত প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছেন। জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত বিতর্কের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রচারণা করা হয়েছে।
একটি দেশের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই দেশটি নানা অজুহাতে বিএনপিকে নসিহত করলেও তারা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কখনো কিছু করবে না। তাই জামায়াত বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকেও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, নেতাদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গেও নিজেদের সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ দেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জতীয় নির্বাচনের আগে নিয়মিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এখন আর তা হচ্ছে না। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহনে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওই বক্তব্যের পর সপ্তাহে অন্তত একবার একবার বৈঠকে বসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নেন।