× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কলেজের গণ্ডি না পেরোনো সেই ছেলেটি

ষোলো আনা

ষোলো আনা ডেস্ক
১৫ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার

স্টিফ জবস। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা উদ্যোক্তাদের একজন। তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের বাতিঘর। ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একটি বক্তৃতা দেন। যে বক্তৃতাটি বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

তিনি সেখানে বলেছিলেন, আজ আপনাদের সামনে আসতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি। মজার ব্যাপার হলো আমি কলেজের গণ্ডিটাও পেরুতে পারি নাই। এখন আমি আমার জীবনের তিনটি গল্প আপনাদের বলতে চাই-

১. জীবনটা এক সুতোয় বাঁধা: আমার মা ছিলেন কলেজ পড়ুয়া। আমার জন্মের আগেই ঠিক করলেন আমাকে দত্তক দেবেন।
পরিবারটি হতে হবে উচ্চ শিক্ষিত, গ্র্যাজুয়েট পরিবার। তবে যে পরিবারে দত্তক দেয়া হয় তারা কেউ গ্র্যাজুয়েট নন। এরপর অনেক কষ্টে মাকে রাজি করানো গেল যাতে আমাকে কলেজে তারা পাঠান। ১৭ বছর পর আমি ভর্তি হলাম কলেজে। তারা আমার পেছনে জীবনের সঞ্চয়ের মোটা টাকা খরচ করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি ছয় মাস থাকার পর সিদ্ধান্ত নেই, না কলেজে পড়া অনেক কষ্টের কাজ। এরপর কলেজে ঘুরে বেড়াই। যখন যে ক্লাসে মন চায় ঢুকে পড়ি। পকেটে কোনো পয়সা নেই। আজ এর রুমে, কাল তার রুমে থাকা শুরু। কোকের বোতল কুড়ানো শুরু করি। প্রতি রোববার ৭ মাইল হেঁটে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম। ভালো খাবার আশায়। কোনো আফসোস ছিল না। ভবঘুরে জীবনে বেশ ছিলাম। যখন যেটা করতে ভালো লাগতো তাই করতাম। কলেজে একবার ক্যালিগ্রাফি কোর্স চালু হলো। মনোযোগ দিয়ে শিখলাম। এরপর ১০ বছর পরে সেই শিক্ষা থেকে ম্যাক কম্পিউটারকে সাজালাম। সুন্দর সব টাইপোগ্রাফি দিয়ে।

২. ভালোবাসা ও বিচ্ছেদ: নেশা আর পেশা মিলে গেলে সে বড় ভাগ্যবান। আমি যখন বাসার গ্যারেজে অ্যাপলের যাত্রা শুরু করলাম তখন আমার বয়স মাত্র ২০। রাতদিন এক করে পরিশ্রম করতাম। ১০ বছরের মাথায় সেই গ্যারেজের কোণায় জন্ম নেয়া অ্যাপল এখন দুই বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান। যেখানে চার হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করে। অদ্ভুত ব্যাপারটি হচ্ছে- আমাকেই বের করে দেয়া হলো অ্যাপল থেকে। আসলে কাজ সামলানোর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ দিয়েছিলাম। তার সঙ্গে শুরু হয় চিন্তার অমিল। সবার সম্মতিতে আমাকেই বের করে দেয়া হলো। অ্যাপল থেকে অপমানিত হয়ে বের হয়ে ফের ঠিক করলাম নতুন করে শুরু করবো। পরের পাঁচ বছরে আমি ‘নেক্সট’ ও ‘পিক্সার’ নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান খুললাম। সেখানে প্রেম হলো। প্রেমিকাকে বিয়েও করলাম। দু’জনে মিলে পিক্সার থেকে বানালাম প্রথম কম্পিউটার এনিমেটেড ফিল্ম ‘টয় স্টোরি’। বর্তমানে পিক্সার পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এনিমেশন স্টুডিও। ফের অ্যাপল আমাকে ডেকে নিলো। ফিরলাম প্রাণের প্রতিষ্ঠানে। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি সেদিন অ্যাপল থেকে ছাঁটাই না হলে এই অসাধারণ ব্যাপারগুলো ঘটতোই না আমার জীবনে!

৩. মৃত্যু: কলেজে থাকা অবস্থায় একট কথা শুনেছিলাম- ‘প্রত্যেকদিন এমনভাবে কাটাও যেন আজই তোমার জীবনের শেষ দিন।’ তবে আমি ৩৩ বছর ধরে প্রতিদিন আয়নার সামনে গিয়ে বলি, তুমি আজ যা যা করবে পরিকল্পনা করেছ, আজ যদি তোমার জীবনের শেষ দিন হতো তবুও কি তাই করতে?’ মন ‘হ্যাঁ’ না বললে বুঝতাম পরিবর্তন চাই শিগগিরই।

পৃথিবীতে এসেছি নগ্ন হয়ে। ফিরতে হবে নগ্ন হয়ে। হারানোর কিছুই নেই আমাদের। তাহলে কেন খামাখা মানুষের প্রত্যাশার চাপ? সেকারণেই বলা- হৃদয় যা চায় তাই কর।

বছরখানেক আগে আমার ক্যানসার ধরা পড়লো। ডাক্তার জানালেন, সেরে যাবার সম্ভাবনা খুব কম। মাস ছয়েক বেঁচে থাকতে পারলে সেটাই হবে পরম পাওয়া। আমি বুঝলাম বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। সন্ধ্যায় আরেকটা বায়োপসি করানো হলো। ফলাফল জানানোর সময় ডাক্তারের চোখ অশ্রুসিক্ত। জানালেন, আমি অসম্ভব সৌভাগ্যবান। অস্ত্রোপচার করে সুস্থ হওয়া সম্ভব। এখন আমি সুস্থ। মৃত্যুকে এত কাছে থেকে আমি আর কখনো দেখিনি।

বিশ্বাস করো, তোমার ভেতরের স্বপ্নটাকে অনুসরণ করে কখনো ঠকবে না। সে কিভাবে যেন সবসময় আগে থেকেই জানে আমাদের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো। সেই তোমাকে পথ দেখাবে অন্ধকারে। উড়িয়ে দেবে বিজয়ের নিশান।
আমাদের ছোটবেলায় খুব চমৎকার একটা প্রকাশনা ছিল ‘ঞযব ডযড়ষব ঊধৎঃয ঈধঃধষড়ম’। এখন তোমাদের কাছে গুগল যেমন, সেই ৩৫ বছর আগে আমাদের কাছে পত্রিকাটা ছিল অনেকটা তেমনি। কিন্তু অনেক দিন চলার পর প্রকাশনাটি বন্ধের দাঁড়প্রান্তে চলে আসে। বয়স তখন তোমাদের মতোই। পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা হাতে নিলাম। পেছনের কভারজুড়ে একটি ছবি। ছবিতে লেখা ‘ক্ষুধার্ত থেকো। বোকা থেকো।’

আমি সারাজীবন এই কথাটি গভীর আবেগে মনে রেখেছি। সবসময় চেয়ে এসেছি তেমনটাই যেন থাকতে পারি চিরদিন। আজ আমার চলে যাওয়ার পালা। তোমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত। এগিয়ে যাও নবীন প্রাণের উচ্ছ্বাসে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর