× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যে নির্বাচন এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুখে মুখে

বাংলারজমিন

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৮ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার

তিনি এখন বিভাগীয় কমিশনার। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ এখন তাকে চেনেন ডিসি মান্নান নামে। ডিসি হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭ মাস দায়িত্ব পালনের পুরো সময়ই আলোচিত ছিলেন নানা ঘটনায়। সম্প্রতি সদর উপজেলার নির্বাচনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য সরাসরি তাকে দায়ী করেছে সরকারি দল। বিক্ষোভ করে তার অপসারণ চেয়েছে ছাত্রলীগ। ভোটের আগের রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউসে তিন প্রার্থীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক, ভোটের দিন তার অধীনস্থ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তাণ্ডব ও তার সফর সিডিউলে কারচুপি- সবই এখন আলোচনায়। তার দিকেই সব অভিযোগের আঙুল। কথা উঠেছে, উপজেলা নির্বাচনে নৌকা ডুবানোর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এমপি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকেও ডুবিয়েছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এখানে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তির রেকর্ড গড়েছিলেন। তিন মাসের ব্যবধানে সদর উপজেলা নির্বাচনে হয়েছে তার সম্পূর্ণ উল্টো ফল। মাত্র ২৬ হাজার ৯শ’ ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।
অভিযোগ উঠেছে, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক সদর উপজেলার ১১৪ কেন্দ্রের কোনটিতে ভোট দিতেও যেতে পারেননি। ইউনিয়ন থেকে জেলা শহরের সর্বত্র সরকার দলের নেতাকর্মীদের দৌঁড়ের উপর রেখেছিল প্রশাসন। কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটরা অনেক নেতাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেছেন। এমপি মোকতাদির চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চিনাইরকে অনেকটাই অবরুদ্ধ করে রেখেছিল প্রশাসন। সেখানকার ভোট কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাকশনে ছিলেন দিনভর। ওই কেন্দ্রের ভোটাররা শেষ এক ঘণ্টা ভোটই দিতে পারেননি। ভোট দিতে আগের রাতে বাড়িতে এসেছিলেন মোকতাদির চৌধুরী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই নাজেহাল হয়েছেন। ভোটের আগের রাতে শ’ শ’ মোটরসাইকেলের চাবি জব্দ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুজ্জামান।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অথচ নৌকার ব্যাজ লাগানো দলের পরীক্ষিত লোকদের মারধর ও কার্যালয়ে ঢুকে নির্যাতনের কথা চিন্তাও করা যায় না। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারও নির্বাচনের এই অবস্থার জন্যে বিভাগীয় কমিশনারের ভূমিকাকেই দায়ী করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সহকারী কমিশনার-ভূমি কামরুজ্জামানের একটি অ্যাকশনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের আত্মীয় তিনি।
বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সার্কিট হাউসে ভোটের আগের রাতে বৈঠক করেছেন তিন প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও, লোকমান হোসেন ও শামীমা আক্তার। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে পুরোপুরি তাদের পক্ষে ছিল প্রশাসন। আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ছিলেন একেবারেই কোণঠাসা।
দুদিনের সফরে ৩০শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। তার সফরসূচিতে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে তিনি উপস্থিতি হয়েছেন সন্ধ্যা ৭টায়। পরদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আখাউড়া, কসবা ও সদর উপজেলায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়। কসবার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওইদিন কসবা উপজেলায় কোন নির্বাচনই ছিলো না। অনেকের প্রশ্ন- সেদিন আশুগঞ্জ, নবীনগর, সরাইল ও নাসিরনগরে জমজমাট নির্বাচন হলেও সেখানে যাননি বিভাগীয় কমিশনার।
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকদের বলেন- ‘এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া কোন কিছু নয়। ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিল। এ কাজটি করার জন্য আমার অধীনস্থ অনেকগুলো জেলা সফর করেছি। কিন্তু কোন জায়গায় কোন সমস্যা হয়নি, শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই হলো। কেন সমস্যা হলো সেটা সবাই ভালো করেই জানেন। সিল মারার জন্য উৎসব করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার সুযোগ দিলে ভালো হতো। তিনি বলেন, নির্বাচন শুরু হওয়ার পর আমি এক ঘণ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিলাম। আমি তাদেরকে বলে এসেছি- তোমরা নির্বাচনটা ভালো করে করবা। এখানে ম্যাজিস্ট্রেটের কি ভূমিকা ছিলো? ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আবদুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন। যারা বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারাও আমার লোক। আমরাতো নির্বাচনটা সেভাবেই করার চেষ্টা করেছি। সার্কিট হাউজে আমার সঙ্গে অনেক লোক দেখা করেছে। তাদের কে বা কারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তা আমি জানতাম না।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর