সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নডালিয়া গ্রামস্থ বেড়িবাঁধ এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে।
গতকাল সরজমিন গিয়ে জানা যায়, বাড়বকুণ্ডের নডালিয়া গ্রামের সাগর উপকূলের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা ও কৃষি জমি রাত ১০টার পর থেকে অবৈধভাবে রাতভর স্কেভেটর দিয়ে ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে একটি অসাধু চক্র মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্তসহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জনবসতি এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতিরাতে এই চক্রটি অর্ধ শতাধিক গাড়ি দিয়ে দফায় দফায় মাটি সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে। গত কিছুদিন ধরে এ এলাকায় মাটি কাটার বিষয়টি রীতিমত উৎসবে পরিণত হয়। স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নডালিয়া গ্রামের পশ্চিমে সাগর উপকূলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে সরকার ১৯৯৬ সালে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। আর বেড়িবাঁধের পাশে আছে সারি সারি উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গাছ। গত কিছুদিন ধরে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নডালিয়া মৌজার বেড়িবাঁধের বিশাল এলাকা জুড়ে মাটি কেটে অর্ধ শতাধিক ড্রাম ট্রাকে ভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে ভূমিদস্যু চক্রটি। প্রতিদিন রাত ১১টার পর ২টি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটে এবং প্রতি ড্রাম ট্রাক মাটি বিক্রি করে প্রায় দুই হাজার টাকা।
সামনে বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধটি ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে স্থানীয়রা। এতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে বিশাল একটি জায়গা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। অথচ ওইসব কৃষি জমিতে গত আউশ ও আমন মৌসুমে ধান রোপণ করে কৃষি পরিবার অনেক লাভবান হয়। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মুলকুত ও ইকবাল হোসেনসহ অনেকে বলেন, রাত ১১টার পর থেকেই মূলত মাটি কাটা শুরু করে ভূমিদস্যুরা। এভাবে প্রতিদিন ঐ চক্রটি কয়েক শ’ গাড়ি ভর্তি মাটি বিক্রি করে। আর এই মাটি কাটার কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করে। এ ব্যাপারে উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন দৈনিক মানবজমিনকে জানান, জায়গাটি পরিমাপ করলে বোঝা যাবে আসলে জায়গাটি উপকূলীয় বনের, নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার তারেক বলেন, মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই মাটি কাটছে তারা। আর ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মাটি কাটলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় সাংবাদিকদের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিযোগ দিলে তা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।