খুলনা মহানগরীর আবাসিক এলাকাগুলোতে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আজও সরানো হয়নি। ২০১৭ সালে নগরীর আবাসিক এলাকার ৪৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরে যেতে নোটিশ দিয়েছিল খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৫১টিতে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না সরায় আবাসিক এলাকা কবে আবাসিক হবে, এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।
মহানগরীতে কেডিএ’র আওতাধীন সোনাডাঙ্গার প্রথম ও দ্বিতীয় ফেস এবং লো-কস্ট হাউজিং এলাকা, নিরালা এবং মুজগুন্নী আবাসিক এলাকা রয়েছে। এ সব আবাসিক এলাকায় রয়েছে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কিন্ডার গার্টেন, ছোট আকারের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অফিস, বিউটি পার্লার, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কোচিং সেন্টারসহ নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ সব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই গড়ে উঠেছে ভাড়া বাড়িতে। এসব প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশেরই নেই পার্কিং ব্যবস্থা। কেডিএ নিরালা আবাসিক এলাকায় ১৭টি, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার প্রথম ফেসে ১৯টি, ২য় ফেসে ৯টি এবং মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় ১৩টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে নোটিশ দিয়েছিল ২০১৭ সালে।
নোটিশের পরের বছরে কেডিএ’র নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরালা থেকে ৩টি, সোনাডাঙ্গা থেকে ৩টি এবং মুজগুন্নী আবাসিক এলাকা থেকে ২টি প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠান সরে যায়। অন্যদিকে গড়ে উঠছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, মাঝেমধ্যে কেডিএ কিছু লোক দেখানো গতানুগতিক এবং দায়সারা কাজ করে। নোটিশ দিতে হবে এবং তার ফলোআপ করতে হবে। তাহলেই হবে বস্তুনিষ্ঠ নোটিশ। কেডিএ’র নোটিশ পাওয়ার পরও যারা আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরায়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিরালা প্রধান সড়কের বাসিন্দা মোসা. রাফেজা খানম জানান, এখন আর আবাসিক এলাকা নেই। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভরে গেছে। কেডিএ কেন এতো ছাড় দিচ্ছে বুঝি না। আইনে যা আছে, তা সবাইকে মানতে হবে। দেশপ্রেমিক হলে সে আইন মানতে বাধ্য। সব আইনই মানুষের কল্যাণে করা হয়েছে। স্বার্থে ঘা পড়লে তখন আবার অনেকে আইনবিরোধী কাজ করতে দ্বিধা করে না।
খুলনা নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এসএম দেলোয়ার হোসেন জানান, আবাসিক এলাকা আবাসিকের জন্য। আর বাণিজ্যিক এলাকা বাণিজ্য করার জন্য। সরকারি নির্দেশনা মেনে কেডিএ’র উচিত হবে আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেল। নোটিশ দিয়ে কাজ না হলে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে।
এ ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম মাহমুদ হাসান এনডিসি, পিএসসি, পিইঞ্জ জানান, কেডিএ’র আওতাধীন আবাসিক এলাকাগুলোতে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ফলোআপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সরে গেছে। বাকিগুলো না সরলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।