তিনি রাহুল গান্ধী নন। তবে গান্ধী পরিবারের সন্তান। রাহুল গান্ধীর চাচাতো ভাই। বরুণ গান্ধী। ভারতের লোকসভার উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর আসনের এমপি। তিনি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ভাই হলেও রাজনীতিতে অবস্থান ভিন্ন মেরুতে। রাহুল কংগ্রেসের সভাপতি। আর বরুণ ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এমপি।
রাহুল গান্ধী সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর ছেলে। আর রাজীব গান্ধীর ভাই সঞ্জয় গান্ধী ও মানেকা গান্ধীর ছেলে বরুণ গান্ধী। একই বংশের, আপন চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও বরুণ গান্ধী ও তার মা মানেকা গান্ধী পারিবারিক ঐতিহ্য ভঙ্গ করে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কংগ্রেসের কড়া সমালোচক তারা দু’জনেই। এমন কি গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তাদের সৃষ্টি হয়েছে বেশ দূরত্ব। বরুণ লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের পিলিভিট আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে সেখানে তাকে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কিন্তু তাকে ছুটে যেতে হচ্ছে সুলতানপুরেও। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মা মানেকা গান্ধী। তাই মায়ের জন্য প্রচারণায় ছুটতে হচ্ছে তাকে। মানেকা গান্ধী বর্তমানে পিলিভিট আসনের এমপি। মা ও ছেলের মধ্যে আসন দুটি বিনিময় করা হয়েছে এবারের নির্বাচনে। সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে বরুণ গান্ধী কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। ভাই রাহুল গান্ধী ও বোন প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্রের প্রচারণায় নামতে পারেন। তাহলে তিনি কি করবেন, আসলেই তাদের পক্ষে নামবেন নাকি বিরুদ্ধেই থাকবেন? এ নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বরুণ গান্ধী। এখানে তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আপনি এবং আপনার মায়ের মধ্যে আসন বিনিময় নিয়ে অনেক কথা। আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিলিভিট থেকে এবং আপনার মা সুলতানপুর থেকে। এটার প্রয়োজন হলো কেন?
উত্তর: আমি সুলতানপুর আসনে প্রতিনিধিত্ব করেছি এর আগে। দুটি আসনই আমাদের কাছে ঘরের মতো। এ নিয়ে অন্য কিছু ভাবা বা পড়ার দরকার নেই। আমার বয়স যখন ৯ বছর তখনই পিলিভিট আসনে প্রথম নির্বাচিত হন আমার মা। তখন থেকেই জনগণের সঙ্গে আমার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এখন দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সেই নির্দেশ মেনে চলছি।
প্রশ্ন: কানকথা ছড়িয়ে পড়েছে যে, আপনি কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। অনেকেই মনে করেন ঘটনা এমন হলে তারা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এ বিষয়টি কি আপনার মনে রেখাপাত করেছে?
উত্তর: ১৫ বছর আগে আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। যেদিন যোগ দিয়েছি সেদিন বলেছি, যেদিন আমি সব কিছু গুটিয়ে নিয়ে রাজনীতি ত্যাগ করবো সেদিন এই দল ছাড়বো। তখনও যে বিষয়টি সত্য ছিল, আজও তাই আছে।
প্রশ্ন: বিজেপিতে উত্তর প্রদেশের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ২০১৭ সালে অনেকে আপনার নাম বলেছিলেন। এ পদের জন্য কি আপনি আগ্রহী?
উত্তর: সততার সঙ্গে বলছি- না। আমি মনে করি আমার মন দেয়া উচিত জাতীয় রাজনীতিতে। আমার কি ভূমিকা হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে আমার দল।
প্রশ্ন: সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি জোট বেঁধেছে। এ জন্য পিলিভিট আসনে এবং উত্তর প্রদেশে বিজেপির জন্য কি লড়াইটা কঠিন হয়ে গেল না?
উত্তর: আমি বিশ্বাস করি ৮০ ভাগ মানুষ ভোট দেন রাজনীতিতে আশা দেখে। যখন আমি গ্রামে যাই, দেখি প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য বিপুল শুভকামনা। আরেকটি জিনিস যা আমি দেখতে পাই তা হলো সরকারের সামাজিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ। এসব মানুষের জীবনযাত্রায় বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি শুধু জাতিভিত্তিক বিষয়ে ফোকাস করছে। তারা এটা বুঝতে সক্ষম নয় যে, মানুষ আশার জন্য ভোট দেয়। কাগজপত্রে এই জোট দুর্দান্ত মনে হতে পারে। কিন্তু যখন ফল প্রকাশ হবে তখন দেখবেন তারা কত খারাপ করেছে।
প্রশ্ন: আপনি কি ভাই রাহুল গান্ধী ও বোন প্রিয়াংকা গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন?
উত্তর: নেতৃত্ব আমাকে যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তাই করবো।
প্রশ্ন: এই নির্বাচনে বিজেপি কেমন করবে বলে মনে করছেন?
উত্তর: আমি মনে করি বিজেপি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। আমি মনে করি আমরা পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, উত্তর-পূর্ব ভারতে বড় ভালো ফল করবো।