দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে লোকসভা নির্বাচন পর্ব, বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের উৎসব চলছে দেশে। কী জানি হবেও বা! তবে এই উৎসবের মধ্যেই কিছু কিছু দৃশ্যের জন্ম হয়ে চলেছে যা দেখে এদেশের গণতন্ত্রের গভীরতা বোঝা যায়। এই যেমন এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী প্রচার সভায় গিয়ে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ভোটারদের বলতে শোনা যায় সিনেমা থেকে বেরিয়ে তিনি যে মানুষের কাছে এসেছেন, তার জন্যই তাকে জিতিয়ে দেয়া উচিত। বটেই তো, একজন রূপালি পর্দার নায়িকা কত কষ্ট করে এসি গাড়ি, এসি বাড়ি ছেড়ে গ্রামে গ্রামে ভোট চাইতে যাচ্ছেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে একি কম কথা।
আর তা ছাড়া একজন সিনেমার স্টার সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে হাজির হচ্ছেন সেই জন্যই তো তাঁকে জিতিয়ে দেয়া উচিত। এমন কথাই তো বলেছিলেন আর এক অভিনেত্রী শতাব্দী রায় তাঁর নির্বাচনী প্রচারে। বলেছিলেন, তাঁকে দেখতে সিনেমায় গেলে, পয়সা দিয়ে টিকিট কাটা লাগে, তাঁর যাত্রা দেখতেও পয়সা খরচ করতে হয়, কিন্তু একমাত্র তাঁকে ভোট দিলে বিনা পয়সায় দেখা যাবে, তাই সাধারণ নাগরিকের উচিত বিনা পয়সায় তাঁকে দেখার জন্য ভোট দেয়া। হ্যাঁ, এই হলো এদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিযোগীদের গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা।
শোনা যাচ্ছে মিমি চক্রবর্তী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলাতে হচ্ছে ভোটের প্রচারে গিয়ে, এই কারণে হাতে গ্লাভস পরছেন। পরতেই হয়, সিনেমার তারকা বলে কথা, আর পাঁচজন আমজনতার স্পর্শে তার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে বৈকি। সিনেমার মানুষজনদের ত্বক যে একটু বেশি স্পর্শকাতর হয় সে কথা আর অস্বীকার করার উপায় কী!
রাজ্যজুড়ে শাসক দলের নেতা ও কর্মীদের প্রচার দিদি রাজ্যের জন্য কত কী করেছেন, যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে একটু একটু অর্থ জমিয়েছেন, আর এখন সেই অর্থ বিলিয়ে কন্যাশ্রী, রুপশ্রী, দু’টাকা কিলো চাল সব বিলিয়ে চলেছেন। যেন সরকারি তহবিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, প্রচারের ধরন দেখলে তো তাই মনে হয়। বিরোধী প্রচারও একইরকম, সবাই আছেন জমিদারি মেজাজেই, শুধু মোড়কটা গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রের রীতি-নীতি, সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ নাগরিক সম্পর্কে অবস্থান, কোনো কিছুই জানার দরকার নেই বরং ভয়াল ভয়ঙ্কর দলতন্ত্রের আগ্রাসন মেনে নিয়েই, আসুন আমরা মেতে উঠি গণতন্ত্রের উৎসবে, সমস্বরে বলি, সখি গণতন্ত্র ইহারে কয়!!
(লেখাটি ভারত থেকে প্রকাশিত সাত দিন. ইন থেকে নেয়া)