চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই পদের জন্য নেওয়া মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নিতে চাকরি প্রত্যাশী মো. এমদাদুল হকের আবেদন দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে উপাচার্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ দিন আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার বলেন, আদালত এই সংক্রান্ত যে রুল দিয়েছেন তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষকের দুটো খালি পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালে চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই রেজাল্ট আর কোনো শিক্ষার্থী করতে পারেনি। এত ভালো রেজাল্ট করার পরও এমদাদুল হকের মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পায় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। ময়মনসিংহের গৌরিপুরের আজিজুল হকের ছেলে এমদাদুল হক ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তিনি ৩.৮৮ সিজিপিএ পেয়ে বিভাগে প্রথম হন।
এরপর ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স পরীক্ষায় তার সিজিপিএ হয় ৩.৯৬। ওই ফলাফলের জন্য তাকে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এমদুলের সঙ্গে পরিক্ষার দিন যা হয় তার বর্ননা দিয়ে বলেন, গত ২৭ মার্চ চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এমদাদুল হক বশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে পৌঁছানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষার্থী তার পথ আটকায় এবং অবরোধ করে তাকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোনায় নিয়ে গিয়ে তার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে তারা। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাগোডায় নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়ে এমদাদুল হককে আরেক দফা মারধর করে তিনি শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ভিসি ও প্রক্টর মহোদয়কে জানান। কিন্তু প্রক্টর ও ভিসি কোনো রকমের পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ তাকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লকআপে রাখে। এরপর ৫টার সময় ওসি এসে ঘটনাটি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। আর থানার ডিউটি অফিসার তার একটি শার্ট এমদাদুল হককে দেন। এরপর ছাড়া পেয়ে এমদাদুল হক তার এক বন্ধুর বাসায় চলে যান। এ ঘটনার ২ দিন পর ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এমদাদুল এবং অনুরোধ করেন যেন তাকে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এমদাদ ওই দরখাস্তটি করার পর দেশের সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়। এমদাদ এই ঘটনার কোনো সমাধান না পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত গতকাল রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে গত ৩০ মার্চ এমদাদুল হক যে আবেদনটি ভিসির কাছে জানিয়েছিলেন সেটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো ভাবেই প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষকের দুটো খালি পদে যেন নিয়োগ প্রক্রিয় সম্পন্ন না হয় সে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৮ অক্টোবর চবির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদের বিপরীতেও দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। যেটিতে আবেদন করেন এমদাদুল হক।