× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচনী বিরোধে বিরান থানাকান্দি ধানকাটাও বন্ধ

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার

 বাড়িছাড়া আনোয়ারা বেগম। অন্য গ্রামে গিয়ে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ জমির ধানই কাটতে পারছেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গ্রামছাড়া থানাকান্দি গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ। বউ-ঝিরাও থাকতে পারছেন না বাড়িতে। ৩১শে মার্চ হওয়া নির্বাচনের পরদিন সংঘর্ষ হয় কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর কাউসার মোল্লার দলের মধ্যে। জিল্লুর রহমান ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্র্থী দোয়াত-কলম প্রতীকের মনিরুজ্জামানের সমর্থক। আর কাউসার মোল্লা নৌকার সমর্থক।
পুলিশ জানিয়েছে ওইদিনের ঘটনায় ১২শ’ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কাউসার মোল্লার পক্ষের লোকজনের অভিযোগ  নৌকার নির্বাচন করায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়েছে। গ্রামছাড়া করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও তার লোকজন এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশও তাদের পক্ষের হয়ে হয়রানি করছে।  
পার্শ্ববর্তী বড়াইল ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে পাগলা নদীর পাড়ে জমির ফসল প্রক্রিয়া করছিলেন আনোয়ারা বেগম। জানান- চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে গিয়ে জমির ধান কাটতে হয়। ধান কাটার জন্য কানি পিছু ১ হাজার টাকাও দিতে হয়। গ্রামে অত্যাচারে থাকতে না পারার কথাও জানান এই নারী। গ্রামছাড়া মো. মুকসুদ মিয়া জানান- দোয়াত কলম মার্কা পাস করার পরদিন থেকে তাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর তার ভাই-ভাতিজারা বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। তার ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। ১৮ দিন ধরে বাড়িছাড়া তিনি। তার বাড়ি ছাড়াও মোস্তাকিম, হোসেন, খোকন, স্বপন ও জহির মিয়ার বাড়ি ও দোকান পাটে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। থানাকান্দি গ্রামে গেলে হেনা নামের আরেক নারী বলেন- রাতে বাড়িতে থাকতে পারি না। উপযুক্ত মেয়েদের বাড়ি থেকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছি। গ্রামের আরেক বৃদ্ধা মজলিশ বেগম জানান, চেয়ারম্যানের লোকজন আমার বাড়িতে ঢুকে আমার কোমরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। এরপর আমার ঘরে ভাঙচুর করেছে। একটা মানুষও ধান কাটতে পারছে না। বলেছে একহাজার টাকা দিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না নিলে ধান কাটতে দিবে না। আরেকজন আক্তার মিয়া জানান- সরকারি নির্বাচন (নৌকা প্রতীক) কেন করলাম সে কারণে আমাদের বলেছে তোরা দেশে থাকতে পারবি না। পুলিশও হুমকি দিতাছে ধইরা লাইবো, মাইরা লাইবো। হামলার সময় তার ঘরে থাকা ছেলের বিদেশে যাওয়ার টাকাও লুট করে নেয়া হয়।
আসেদ মিয়ার ৪ কানি জমির বোরো ফসল কাটা বাকি। তার ছেলেরা বাড়ি ছাড়া বলে ফসল কাটতে পারছেন না। গ্রামের কাউসার মোল্লার পক্ষের সব লোকজনেরই অভিযোগ পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। থানাকান্দি ছাড়াও উত্তর লক্ষ্মীপুর, সাতঘরহাটি ও গৌরনগর গ্রাম অশান্ত নির্বাচনোত্তর এই বিরোধে। গত ১৮ দিন ধরে শ’ শ’ মানুষ বাড়িছাড়া। আর সে কারণে ফসল কাটাও বন্ধ। হামলার সময় অর্ধশত বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি বাড়িতে। এ ব্যাপারে জানতে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন  পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। নবীনগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ জানান, পুলিশ নৌকা বা দোয়াত-কলম পক্ষ বিবেচনা করে আসামি ধরছে না। যারা দাঙ্গায় লিপ্ত ছিল তদন্ত করে তাদেরকেই ধরা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না দাবি করে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন- যারা সাধারণ মানুষ তাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা ধান কাটতে পারেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর