× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আগুনে পুড়লো মালিবাগের ২৬০ ব্যবসায়ীর সম্বল

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার

গুলশান, খিলগাঁওয়ের পর এবার আগুন হানা দিলো মালিবাগ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের স্বপ্নে। মুহূর্তেই কেড়ে নিলো তাদের সম্বল। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সবক’টি দোকানের পণ্য। অথচ এই দোকানগুলোই ছিল একেকটি পরিবারের ভরণপোষণের একমাত্র অবলম্বন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়  , গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মালিবাগের কাঁচা বাজারে আগুন লাগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে ১৩ টি ইউনিট দেড় ঘন্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, আগুনে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুদি, সবজি, ছাগল-গরুর মাংশের দোকানসহ মোট ২৬০ টি দোকান পুড়েছে।
এর মধ্যে কারো কারো একাধিক দোকান পুড়েছে। শবেবরাত ও রোজার মাসের জন্য অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য মজুত করেছিলেন। কিন্তু ভয়াল এই আগুন মুহূর্তেই শেষ করে দিয়েছে তাদের স্বপ্ন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারের পশ্চিম পাশের মুদির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে ফোনে জানানো হলে, ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, পাশের একটি মেস থেকে ২০ থেকে ২৫ জনকে নিরাপদ স্থানে বের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২০টির মতো ছাগল পুড়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তদন্ত কমিটি গঠন করে এর কারণ বের করা হবে। মালিবাগবাজার বণিক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. নুরুল হক নুরু বলেন, ২৬০টি দোকানের কোনটি অবশিষ্ট নেই, নগদ টাকাও পুড়েছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, মালিবাগের এই কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সবার মুখে হতাশার ছাপ। কেউ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আবার কেউ পুড়ে যাওয়া দোকানে ভালো মালামালগুলো বের করার চেষ্টা করছেন। আগুনের ঘটনায় বেশিরভাগ দোকানের মজুতকৃত আলু, চালসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও মাছ, সবজি ও ডিমসহ অনেক কাঁচামালের সবকটি দোকান পুড়ে গেছে। ছাগল পুড়েছে প্রায় ৩০টি। এছাড়া পুড়েছে দুটি গরু, মাছ ও মুরগি। তবে নিরাপত্তাকর্মীর তৎপরতায় পাশের একটি মেসের সবাই প্রাণে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে খোরশেদ স্টোরের মালিক খোরশেদ বলেন, সামনে রোজার মাস। সব চিন্তা ভাবনা করে প্রায় ২০ লাখ টাকার চাল দোকানে তুলেছি। সব শেষ হয়ে গেছে। আমার কিছু নাই। একবারে পথে বসে গেছি। ফায়ার সার্ভিস আসার পরও পানি দিতে দেরি করে ফেলছে। এর মধ্যে সব পুড়ে গেছে। একটা দোকানও রেহাই পায়নি। শিপন নামের আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন, এখানে অনেকেই লোন করে মালামাল উঠায়। আগুন লেগে সব শেষ হয়ে গেছে।  আমার সবজি দোকান পুড়ে শেষ। কিছুই নাই। একটা আলুও বাইর করতে পারলাম না। আবদুল হাই নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দুদিন আগে ৬ লাখ টাকা ঋণ করছি পণ্য কেনার জন্য। এর মধ্যে চার লাখ টাকার মাল কিনছি গতকাল (বুধবার)। এখন এক টাকার মালও আমার দোকানে নাই। সব শেষ হয়ে গেছে। মুদি ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেন বলেন, আমার দোকানে ২৫ লাখ টাকার মালমাল ছিল। রোজার জন্য আগাম মজুত করছিলাম কিছু।

কিন্তু এখন কিছু নাই। আগুনে সব পুড়ে গেল। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। তিন ভাই মিলে মালিবাগ কাঁচাবাজারের ব্যবসা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিন ভাইয়ের একটি দোকানও আগুন থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের মধ্যে মানিক জানান, এক সপ্তাহ আগেই দুই দোকানের মালামাল তুলেছি। ফলের দোকানে কয়েক লাখ টাকার ফল ছিল। বেকারির দোকানে ১০ লাখ টাকার ওপরে পণ্য ছিল। এখন কিছু নেই। আমাদের তিন ভাইয়ের যা পুঁজি ছিল তার সব দিয়েই এই দুই দোকানের মাল কেনা। এখন কারো কাছে কোনো পুঁজি নেই। এই দোকান আবার কীভাবে দাঁড় করাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে বড় ভাইকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন মসলা ব্যবসায়ী মালেক। তিনি জানান, শুক্রবার ও শবেবরাত উপলক্ষে তার দোকানে পন্য বেশি ছিল। আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার কম হবে না। আগুনে গরম মসলা তো পুড়ছেই, এছাড়া দোকানের সাটার, কাঠের তাক এবং ক্যাশবাক্সও পুড়ে গেছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছেন তিনি। চাল ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, আমার দোকানে ২৫ লাখ টাকার চাল ছিল। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ বস্তা চাল বাঁচাতে পেরেছি।

এগুলোর বেশিরভাগই আবার পানিতে ভিজে গেছে। কাঁচাবাজারের চারটি মুদি দোকানের মালিক নাদিম আলী। আগুনে তার ৩টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, এই বাজার মধ্যবিত্তদের অনেক পছন্দের ছিল। বাড্ডা-রামপুরা থেকেও অনেকে এখানে এসে বাজার করতেন। রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, এ আশঙ্কায় তিন-চার বছর ধরে ক্রেতারা আগেভাগেই রোজার কেনাকাটা করেন। তাই সবাই অনেক পন্য মজুত করেছিলেন। আমাদের সবই পুড়ে গেল। সরকার ঋণ প্রদান বা সাহায্য না করলে আমাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সিরাজ বলেন, আমার দোকানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ইলিশ মাছ ছিল। সব মাছ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া বাজারের প্রতিটি মুদি দোকানে ৫০/৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব দোকানই পুড়ে গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর