প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় মোট ৩ শত ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার প্রতিটি কাঁচা ঘর নির্মাণের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। হতদরিদ্রদের মধ্যে ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দরিদ্র এসব মানুষের ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। এসব ঘরে ব্যবহৃত পিলার, রড, ইট, ফ্লোর ঢালাই, চালা ও দরজা-জানালার কাঠগুলো একেবারে নিম্ন মানের লাগানো হয়েছে। যার ফলে এসব ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়ে উপকারভোগিরা।
জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইউএনও, ভূমি কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, পিআইও এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগনের সমন্বয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ করা হবে। কিন্তু পিআইসির সভাপতি (কুলাউড়ার ইউএনও) একক ক্ষমতাবলে তাঁর পছন্দের লোকজনকে দিয়ে প্রকল্পের কাজটি করাচ্ছেন। যা নিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কানাইটিকর গ্রামের রব উল্লাহ (৬৫) প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন।
শুরুতে খুশি হলেও পরবর্তীতে ঘরের নির্মাণ কাজ দেখে তিনি খুশি হতে পারেননি। প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কাজ একবারে নিম্ন মানের হয়েছে, এই ঘর কয়দিন টিকবো আল্লায় জানে । একই ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের আব্বাস আলী ও আব্দুল আহাদ জানান, মাত্র এক মাসের মধ্যে ঘরের নিচ (ফ্লোর) ফেটে গেছে। যারা কাজ করছে তারা ২০ টুকরি বালি/কংক্রিটের সাথে মাত্র ১ বস্তা সিমেন্ট দিয়া এক-দেড় ইঞ্চি ঢালাই দিছে। এর লাগি এই অবস্থা। জয়চন্ডী ইউনিয়নের রঙ্গিরকুল গ্রামের কয়েছ মিয়া জানান, ঘরের কাজে বেনামি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। খুঁটিগুলোও একেবারে দূর্বল। পৃথিমাপাশা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আজহারুল ইসলাম জানান, আমি নিজে এসব কাজ করি। কিন্তু আমারে যে ঘরটা দেয়া হয়েছে তা একেবারে নিম্ন মানের। এসব ঘর নির্মাণে ৬০-৬৫ হাজার টাকার চেয়ে বেশি খরচ হওয়ার মত না। এসব এলাকার আরও ১০-১২ জন উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, বিনামূল্যে পাওয়া ঘরের ভিটে ভরাট করতে আমাদেরকে বাধ্য করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা। আমরা দিনমজুর মানুষ, এরপরও তাদের কথামত নির্মাণকারী শ্রমিকদের নিয়মিত ২বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল আহবাব চৌধুরী জানান, তালিকা করার সময় কিংবা কাজ করার কিছুই জানিনা। যখন জানলাম তখন দেখি অনেক অনিয়ম। যা নিয়ে এখন আমি পড়ছি বিপাকে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল লাইছ জানান, এই প্রকল্পে ১ লাখ টাকা বরাদ্ধের মধ্যেই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘর শক্ত, মজবুত, টেকসই বা সুবিধাভোগির প্রত্যাশা অনুযায়ী নাও হতে পারে। যার কারনে সুবিধাভোগিরা অনেকেই অসন্তুষ্ট হতেই পারেন। কারণ নির্মাণ সামগ্রীর বাজারমুল্য ও শ্রমিকের মজুরি এখন অনেক বেশি।
এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-০২ এর উপ-পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এসএম হামিদুল হক গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ প্রকল্পটি উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা বাস্তবায়ন করছেন। কাজে কোন অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।