ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র একরামুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালের ২৯শে নভেম্বর সংসদ সচিবালয়ের ইন্সপেক্টর(এস্টেট) পদে যোগ দেন। ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে হন সহকারী এস্টেট অফিসার। সেই শেষ। এরপর কেটে গেছে ১৬ বছর। আজও পদোন্নতি পাননি। এতদিনে তিনি হতেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব।
স্পিকার, সচিব, হুইপ থেকে শুরু করে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সবাই কেবল আশ্বাসই দিয়েছেন। সর্বশেষ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে সংসদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সংসদ সচিবালয়ের একটি সিন্ডিকেট আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এবারও তার ভাগ্য খুলবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আগামী ২৩শে মে সংসদ কমিশনের ৩০তম বৈঠক। সেখানেই নির্ধারণ হবে তার পদোন্নতির ভাগ্য। সম্প্রতি পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের কাছে একটি আবেদন করেন একরামুল হক। সঙ্গে সঙ্গে স্পিকার বিষয়টি সমাধান করতে সচিবকে নির্দেশ দেন। আপাতত ফাইলটি সচিবের টেবিলে পড়ে রয়েছে। আগামী কমিশনে সেটা উঠবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এ প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন না বলে জানান। এদিকে একরামুল হক স্পিকারের কাছে দেয়া চিঠিতে বঞ্চিত হওয়ার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, বিগত ২০০৩ সালে ‘সহকারী এস্টেট অফিসার’ পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত আছি। উক্ত জটিলতা না হলে ২০০৩ সালে ‘সহকারী এস্টেট অফিসার’, ২০০৮ সালে ‘এস্টেট অফিসার এবং ২০১৩ সালে ‘সিনিয়র সহকারী সচিব’ পদে পদোন্নতি পেতাম। কারণ ‘সহকারী এস্টেট অফিসার’ ও ‘এস্টেট অফিসার’ উভয় পদে আমিই ছিলাম একমাত্র বৈধ ফিডার পদধারী। চিঠিতে তিনি বলেন, প্রশাসনিক জটিলতার উদ্ভব না হলে ২০০৮ সালেই আমিই হতাম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব প্রথম ‘এস্টেট অফিসার’। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সঙ্গে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা, প্রটোকল অফিসার, রিসার্চ অফিসার, কমিটি অফিসার, একাউন্টস অফিসার ইত্যাদি পদগুলো বহাল রাখা হলো অথচ যোগ্য ফিডার পদধারী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে ‘এস্টেট অফিসার’-এর একমাত্র পদটিকে বিলুপ্ত করা হলো? এদিকে, এস্টেট শাখার কাজের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংসদ ভবন ও মন্ত্রী হোস্টেলের অফিস কক্ষ বরাদ্দকরণ ছাড়াও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন ৭৪১/বাসা/ফ্ল্যাটের বরাদ্দ সংক্রান্ত কাজ অত্র শাখা থেকে করা হয়। অদূর ভবিষ্যতে সংসদ এলাকার জায়গা-জমিও এস্টেট শাখার আওতাধীনে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ এস্টেট অফিসারের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাছাড়া, পদোন্নতির পরিবর্তিত বর্তমান অবস্থায় আমার উপরে প্রায় শতাধিক জ্যেষ্ঠ ফিডার পদধারী অপেক্ষমাণ রয়েছেন। ফলে অবশিষ্ট চাকরিকালে আমার পদোন্নতির কোন ধরনের সম্ভাবনা নেই। চিঠিতে তিনি বলেন, একজন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও একমাত্র বৈধ ফিডার
পদধারী হিসেবে ‘এস্টেট অফিসার’ পদে আমি পদোন্নতি পাওয়ার অধিকারী ছিলাম, আছি। কারণ, প্রশাসনিক জটিলতার ফলে আমি আমার পদোন্নতির বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারি না। এটি আমার খবমরঃরসধঃব বীঢ়বপঃধঃরড়হ. তাছাড়া যথাসময়ে পদোন্নতি না পাওয়ায় আমি আর্থিক ও সামাজিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। একজন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে পুনর্বাসনের আশায় এ আবেদন করছি। আমার বিনীত প্রত্যাশা, এ বিষয়ে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় পূর্বের ন্যায় আপনি আপনার উচ্চ শিক্ষা, মেধা ও মননের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমার বঞ্চনার যথাযথ প্রতিকার করবেন। চিঠিতে তিনি উল্ল্যেখ করেন, জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘১ম সংসদীয় পরিচিত ও অফিস ব্যবস্থাপনা কোর্স’-এর প্রথম স্থান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারী স্টাডিজ কর্তৃক আয়োজিত ‘জেনারেল কম্পিউটার ওরিয়েন্টেশন কোর্স’-এর প্রথম স্থান অধিকার করেছি।