× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাদক ও জঙ্গির খোঁজে যা হচ্ছে চট্টগ্রামে

এক্সক্লুসিভ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ মে ২০১৯, রবিবার

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর সিএসসিআর হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সে কর্মরত শওকত হোসেন। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার পথে মুরাদপুর ফ্লাইওভারে উঠার মুখে পুলিশের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে পড়েন অটোরিকশা চালক। এরপর নেমপ্লেটে লেখা সুমন নামে এক পুলিশ সদস্য বলেন, গাড়ি থেকে নামেন। কেন জানতে চাইলে বলেন, এখানে পুলিশের চেকপোস্ট। অগত্যা অটোরিকশা থেকে নামেন শওকত হোসেন। দেখতে পান আরো দুই পুলিশ সদস্য। এদিক-ওদিক দেখে শওকত হোসেন বলেন, কোথায় চেকপোস্ট। এখানে তো সেরকম কোনো কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

পুলিশ সদস্য বলেন, দেখা লাগবে না।
এই গাড়িতে ইয়াবা পাচার হচ্ছে এমন ইনফরমেশন আছে আমার কাছে। বলেন কি? বিস্মিত হয়ে শওকত হোসেন বলেন, ভাই আমি বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। এই দেখুন ডাক্তারের কাগজপত্র।

এরপরও গাড়িতে তল্লাশি চালান তিনি। ইয়াবা না পেয়ে পুলিশ সদস্য বললেন, আপনারা যে, স্বামী-স্ত্রী তার কাবিননামা দেখান। আইএস জঙ্গিরা স্বামী-স্ত্রী সেজে বোমা মারে। তা নাহলে আপনাদের থানায় নিয়ে যাব। শওকত বললেন, ডাক্তারের কাছে রাত ৮টায় আমার শিডিউল আছে। ঠিকমতো পৌঁছাতে না পারলে স্ত্রীর চিকিৎসা হবে না। এ সময় পকেটে হাত দিয়ে ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় পুলিশ সদস্য সুমন। এ সময় কোন থানার পুলিশ জানতে চাইলে সে উল্টো অশ্রাব্য গালিগালাজ করে বলে জানান শওকত হোসেন।

শনিবার দুপুর আড়াইটা। ফটিকছড়ি থেকে বাসে চড়ে নগরীর মুরাদপুর আসছিলেন মুদি দোকানদার ইলিয়াছ। বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অক্সিজেন পুলিশ বক্সের সামনে ইশারা দিলে বাসটি থামে। তল্লাশি করতে বাসে উঠে পড়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। মিনিট পাঁচেক পর বাসের চালকসহ তিন যুবককে নামিয়ে আনে পুলিশ।

ইয়াবা বহনের সন্দেহে পুলিশ বক্সের ভেতরে নিয়ে তাদের দেহ তল্লাশি করেন তারা। ওই তিন যুবক মাদক ব্যবসায় জড়িত নয় বলে জানানোর পরও তাদের শরীর এক্স-রে করাতে হবে ধমক দেন এক পুলিশ সদস্য। অক্সিজেন এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করে মাদকের অস্তিত্ব না পেয়ে ২০-২৫ মিনিট পর অবশেষে ওই তিন যুবককে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওইদিন বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ওই পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান করে মাদক ও আইএস জঙ্গির খোঁজে তল্লাশির নামে নিরীহ যাত্রীদের পুলিশি হয়রানির এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অক্সিজেন পুলিশ বক্সে মাদক তল্লাশির নামে নিরীহদের হয়রানির চিত্র নিত্যদিনের। এ চেকপোস্টে মাদক তল্লাশির নামে বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ওসি খোন্দকার আতাউর রহমান বলেন, মাদক কিংবা অবৈধ কিছু তল্লাশিকালে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কিছু কষ্ট শিকার করতে হবে এমনটা স্বাভাবিক। তবে তল্লাশির নামে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। শুধু অক্সিজেন নয় তল্লাশির নামে নগরজুড়ে পুলিশি হয়রানির এ চিত্র নিত্যদিনের। ভুক্তভোগী কলেজছাত্র আজম খান বলেন, দুর্বৃত্তদের দেখলে মানুষ যেমন ভয় পায়, তেমনি পুলিশ চেকপোস্ট দেখলেও মানুষের বুক কেঁপে ওঠে।

নাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবহান জানান, গত ১৬ মে সকালে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে নগরের নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন তিনি। অক্সিজেন মোড়ের চেকপোস্টে তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি থামায় পুলিশ। এসময় তার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার শঙ্কায় পড়ে যান আবদুস সোবহান।

তল্লাশিকারী পুলিশ সদস্যকে সোবহান বলেন, ভাই আমার কাছে ছেলেমেয়ের জন্য পোশাক কেনার টাকা আছে। আপনি পকেটে হাত দেবেন না।

নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার একাধিক দোকানদার জানান, চান্দগাঁও থানা পুলিশের চেকপোস্টে প্রতিদিন নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পথচারী, যাত্রী কিংবা শিক্ষার্থীদের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে পুলিশ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার। অভিযোগ আছে, নগরের গণি বেকারি, সার্সন রোড, পলিটেকনিক্যাল, আমবাগান ভাঙারপুল, জাকির হোসেন রোডের চক্ষু হাসপাতালের সামনে, একই সড়কের এমইএস কলেজ কবরস্থান, পাহাড়িকা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, পাঁচলাইশ থানাধীন বনগবেষণা ইনস্টিটিউট, সিআরবি, আগ্রাবাদ, সল্টগোলা ক্রসিং, বিমানবন্দর সড়ক, টাইগার পাসসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে।

হোসেন আহমেদ নামে এক ভুক্তভোগী জানান, এপ্রিল মাসে পাহাড়তলী থানা এলাকায় ছেলের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে মেহেরুন্নিসা নামে এক নারী আদালতে পাহাড়তলী থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মেহেরুন্নিসার অভিযোগ, ২৫শে এপ্রিল রাতে টহল পুলিশ তার ছেলে মেহেদি হাসানকে রাস্তা থেকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার ছেলের পকেটে ৪০টি ইয়াবা পাওয়ার অভিযোগে মামলা দেয় পুলিশ। পরদিন মেহেদীকে আদালতে চালান দেয়। আদালতের নির্দেশে পিবিআই এ ঘটনা তদন্ত করছে।
ওমেশ চন্দ্র নামে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চেকপোস্টে আতঙ্কজনক তল্লাশি চালায় পুলিশ। রিকশা কিংবা গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমেই কয়েকজন পুলিশ মিলে সংশ্লিষ্ট পুরুষকে ঘিরে ধরে। এরপর সারা শরীরে তল্লাশি চালায়। সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ হাতড়েও দেখে পুলিশ। অনেক সময় মানিব্যাগ থেকে টাকাও রেখে দেয়।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার কারণে পুলিশের তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের তল্লাশির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে তল্লাশির নামে হয়রানি কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হাতবোমা বিস্ফোরণে আইএসর দায় স্বীকারের পর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মহানগরীজুড়ে রেড এলার্ট জারি করে পুলিশ। এরপর থেকে নগরীর অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর