× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫,০০০ অবৈধ সংযোগ অসহায় বাখরাবাদ

শেষের পাতা

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ মে ২০১৯, রবিবার

গ্যাস সংযোগ বন্ধ তিন বছর। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনই নতুন গ্যাস সংযোগ হচ্ছে। মাইলের পর মাইল সম্প্রসারণ লাইন বসানো হচ্ছে। এখানে গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ বাখরাবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কাছে। অবৈধ সংযোগে বাধা হওয়ায় বিভিন্ন সময় নাজেহাল হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। অফিসে ও বাসায় গিয়ে অস্ত্র ঠেকানো হয়েছে তাদের কাউকে কাউকে। নানা ভয়ভীতির কারণে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে পড়েছে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৩ হাজার ৯৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২৩টি অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ।


আর অবৈধ সংযোগের পরিমাণ তাদের হিসেবে ৫ হাজার। কিন্তু বাস্তবে দুটোই অনেক বেশি বলে জানাচ্ছে অফিসের অন্য সূত্রগুলো। তারা জানিয়েছে, অবৈধ সংযোগ সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো হবে। এর কারণ কর্তৃপক্ষ অবৈধ লাইন চিহ্নিত করছে একদিকে, অন্যদিকে মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসিয়ে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ ১৫ হাজার হয়ে থাকলে সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে  ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। তাছাড়া এই সংযোগ বৈধভাবে দেয়া হলে সিকিউরিটি মানি হিসেবে একেকটি সংযোগ থেকে আসতো ১৬’শ টাকা করে। ১৫ হাজার সংযোগে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরসহ আশেপাশের এলাকার গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ ছিল তিতাস। এরপর দায়িত্ব নেয় বাখরাবাদ। দায়িত্ব পরিবর্তনের সময় আবাসিক গ্রাহক ছিল ১৪ হাজার। পরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত আরো ৮ হাজার সংযোগ দেয় বাখরাবাদ। সবমিলিয়ে এখন তাদের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২২ হাজার। কিন্তু এই সময়ে বাখরাবাদ  নতুন কোনো নেটওয়ার্ক করেনি বলেই জানান এর কর্মকর্তারা। বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এবং শহর থেকে দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং শহর বাইপাস সড়কের দু’পাশে সর্বোচ্চ এক কিলোমিটার পর্যন্ত বাখরাবাদের গ্যাস নেটওয়ার্ক আছে বলে জানান তারা। কিন্তু এখন অবৈধভাবে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে উত্তর দিকে বিশ্বরোড পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের দু’পাশে এবং দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত যত গ্রাম আছে সবখানেই গ্যাসের লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রামে স্থাপিত হয়েছে গ্যাসের অবৈধ নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারণ লাইন)।

অবৈধভাবে বসানো এই সম্প্রসারণ লাইন থেকে শত শত বাড়িঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বাখরাবাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত সুহিলপুরের কলামুড়ি কবরস্থান থেকে তাজুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত ৪ হাজার ফুট, ঘাটুরা মামুন মোল্লার বাড়ি এলাকায় ৩ হাজার ফুট, দারমা ও নন্দনপুরে ৪ হাজার ফুট, কোনাহাটি-মাইঝহাটি জড়জড়িয়া পাড়া ও মালিহাতায় ৫ হাজার ফুট, রামরাইল থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, সুহিলপুরের হাড়িয়ায় ৪ হাজার ফুট, তেলীপাড়ায় ৭ হাজার ফুট,  গৌতমপাড়া কাঠবাড়িয়া দীলিপ দাশের বাড়ি এলাকায় ৬ হাজার ফুট। এছাড়া সুহিলপুর তেলীহাটি, হিন্দুপাড়া,  গৌতমপাড়া, কেন্দুবাড়ি এলাকায় প্রায় ৮ হাজার ফুট, রাজঘর, নাটাই, ভাটপাড়া ও আমতলীতে ৬ হাজার ফুট, রামরাইলের ভোলাচংয়ে ৩ হাজার ফুট, বুধলগ্রামে ৬ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে।

এ ছাড়া  বুধলবাজার থেকে তৈয়ব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত শালগাঁও-কালীসীমা গ্রামে হাজার হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে সুহিলপুরে। এরপর বুধল ইউনিয়নে। সেখানে অবৈধ ভাবে সম্প্রসারণ করা গ্যাস লাইন থেকে হাজারের মতো সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া নাটাই ইউনিয়নের আমতলী, রাজঘর ও ভাটপাড়াতে ৩ শ’ ও বুধলের মালিহাতায় প্রায় দেড়শ’ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। খাটিহাতা ঈদগাহ রোড এবং খাটিহাতা গ্রামে  ২ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন বসিয়ে দেড় শ’র মতো অবৈধ সংযোগ  দেয়া হয়েছে। সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিখাতা গ্রামে। প্রায় প্রতিদিনই সংযোগ দেয়া হচ্ছে কোনো কোনো স্থানে।

বাখরাবাদের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন এখানে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একটি চক্র ডিপার্টমেন্টের এগেনেস্টে দাঁড়িয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে অবৈধ গ্যাস প্রদানের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তারা পাইপ আনছে, লাইন বসাচ্ছে, রাইজার উঠাচ্ছে। বিল বই দিচ্ছে। সবই করছে। কিন্তু আমরা সেভাবে কোনো কিছু করতে পারছি না। বলতে গেলে আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে। প্রশাসনও শঙ্কিত। আমরা অনেক জায়গায় অভিযান করতে চাইলে তারা কিছুটা পিছিয়ে থাকছে। বলছে এই এলাকাটা পরে করি। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন- সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়া। তিনি জানান, গত মাসের ১০ তারিখে একটি বড় অবৈধ লাইন অপসারণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচও হয় তাতে। কিন্তু অভিযানের দিন সকালে সদর উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। তারা ১/২ দিনের মধ্যে অনেক বড় লাইন বসিয়ে ফেলছে। কিন্তু আমরা চাইলেও প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়ায় যখন তখন বড় কোনো অভিযান করতে পারছি না। বার বার ডিসি’র সহায়তা চাইছি। কোম্পানির এমডিকে দিয়ে ডিসিকে অনুরোধ করাচ্ছি ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্য।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর