বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে কাজ করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম)। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচারের শিকার হওয়া ২৫৯ জন মানুষকে সহায়তা করেছে সংস্থাটি। সমপ্রতি কক্সবাজারে আয়োজিত এক সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে আইওএম’র কার্যক্রম পরিচালন বিষয়ক উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা। চলতি সপ্তাহে কক্সবাজারে বাংলাদেশের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এবং জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ অভিযোজন শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করে আইওএম। কক্সবাজারে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই সম্মেলন করেন আইওএম প্রতিনিধিরা
। আইওএম’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার মোকাবিলায় লড়াই জোরদার করছে বাংলাদেশ। ২০১৮-২০২২ সালের জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, নিরাপত্তাকর্মীদের আরো ভালো প্রশিক্ষণ ও বিদ্যমান আইনের আরো ভালো প্রয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মানব পাচার রোধের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে আইএএম। চলতি সপ্তাহে মানব পাচার রোধ বিষয়ক পরিকল্পনাটি কক্সবাজারে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। ২০১২ সালে পাস হওয়া মানব পাচার বিরোধী আইন অনুসরণ করেই নতুন পরিকল্পনাটি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক সুযোগ সীমিত থাকায় অনেক বাংলাদেশিই উন্নত জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাড়নায় বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। এদের মধ্যে অনেকেই শিকার হন মানব পাচারকারীদের প্রতারণার। ফলস্বরূপ বিদেশের উন্নত জীবনের বদলে তারা শিকার হন জোরপূর্বক শ্রমদানের বা ব্যবহৃত হন অন্যান্য নির্যাতনমূলক কাজে।
এসব পাচারকাজ বন্ধ করতে প্রতিরোধ, সুরক্ষা ও বিচারকাজের ভিত্তিতে আইওএম’র একটি বহুমুখী পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি অনুসারে, মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো সরকারকে জোরালো আইন ও এর প্রয়োগ এবং শিকারের সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশে আইওএম’র কার্যক্রম পরিচালন বিষয়ক উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে কাজ করছে আইওএম। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচারের শিকার হওয়া ২৫৯ জন মানুষকে সহায়তা করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৬০ ভাগ ছিল নারী ও ৪০ ভাগ ছিল পুরুষ। এদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মানুষই জোরপূর্বক শ্রমদানের শিকার হয়েছিল। কিন্তু সত্যিকারে পাচার হওয়া মানুষের সংখ্যা আরো বেশি। যারা সামনে এসে বলে না- আমাদের পাচার করা হচ্ছে।
কক্সবাজারে তুলনামূলকভাবে পাচারের হার বেশি। এই হুমকি অঞ্চলটিতে সদা বিদ্যমান। বিশেষ করে সেখানে অবস্থিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরো বেশি। তাদের সহজেই প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা যায়। আইওএম’র সুরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক ব্যবস্থাপক চিজে মুয়েলার বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন আইন প্রয়োগের দিকে বিশ্বে নজির স্থাপন করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আইওএম, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগ (ডিএফআইডি) ও অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় মানব পাচার রোধে বেশ কঠোর পরিশ্রম করছে। আইন প্রস্তুত রয়েছে এখন সমস্যা হচ্ছে ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ করা, আরো ভালো প্রয়োগ ও কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।