× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চীনে যৌন দাসত্বে বাধ্য হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার হাজারো নারী

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
১১ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার

গত ৫ বছর ধরে লি আরো বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি ছিলেন। উত্তর কোরিয়া ছেড়ে পালিয়ে চীনে আসার পর এক প্রতারক চক্রের হাতে পড়ে তার এই পরিণতি হয়েছে। সেখানে তাদেরকে সাইবার সেক্সে বাধ্য করা হচ্ছে। ৬ মাস পরে তাকে মাত্র একবারের জন্য বাইরে যেতে দেয়া হয়।
লি উত্তর কোরিয়ার একটি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের যথেষ্ট খাবার ছিল। আমরা গ্যারেজে ধান ও গম রিজার্ভ করে রাখতাম। কিন্তু আমার বাবা-মা ছিলেন নিয়ম কানুনের বিষয়ে অত্যন্ত কড়া।
আমাকে তারা সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে থাকতে নিষেধ করতো। একইসঙ্গে তার পছন্দের বিষয় মেডিসিন নিয়ে পড়াশুনা করতেও পরিবারের সমর্থন পাননি পরিবারের পক্ষ থেকে। একদিন এ নিয়ে তাদের সঙ্গে তর্কের পর দেশ ছেড়েই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন লি। তিনি একজনের সঙ্গে কথা বলেন যে তাকে চীনে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এটিই ছিল তার জীবনের সব থেকে বড় ভুল। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের থেকে ৫০০ হতে ১০০০ ডলার করে নেয়া হয় নিরাপদে চীন পৌঁছে দেয়ার জন্য। তাদেরকে তুমেন নদী পার হয়ে চীনে প্রবেশ করতে হয়। এটিই চীনকে উত্তর কোরিয়া থেকে আলাদা করেছে। কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সাল থেকে এই সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
শুধু লি নয়, উত্তর কোরিয়ার হাজারো নারীর গল্পই প্রায় একইরকম। সিএনএন জানিয়েছে, তাদের মধ্যে আছে ৯ বছরের শিশুও! লন্ডনভিত্তিক সংস্থা কোরিয়া ফিউচার ইনিশিয়েটিভের (কেএফআই) রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদেরকে উত্তর কোরিয়া থেকে পাচার করা হচ্ছে চীনের কোটি কোটি ডলারের যৌন ব্যবসায় যুক্ত করতে। উত্তর কোরিয়ান নারীদের চীনে আনার পর বাধ্য করা হচ্ছে পতিতালয়ে কিংবা ওয়েবক্যাম মডেল হিসেবে কাজ করতে। তাদের বেশির ভাগই চীন ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে অবস্থান করেন। তবে এই জাতীয় দাবি সিএনএন যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।
তবে লি তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ওয়েবক্যাম মডেল হিসেবে ৫ বছর কাজ করার পর এক অপরিচিত ব্যক্তি তাকে মুক্তির কথা বলে। তিনি আসলে একজন দক্ষিণ কোরিয়ার যাজক। তিনি বলেন, চিন্তা করো না লি। আমরা তোমাকে উদ্ধার করবো। সেই ব্যক্তির হাত ধরেই এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন লি।
লি-এর মতো কত মানুষ প্রতিবছর উত্তর কোরিয়া ছেড়ে পালিয়ে আসছে তার কোনো হিসাব কোথাও নেই। তবে দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করেছে, ১৯৯৮ সাল থেকে তারা প্রায় ৩২ হাজার উত্তর কোরিয়ার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। শুধুমাত্র গত বছরই দেশটি ১১৩৭ জনকে আশ্রয় দিয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ ভাগই ছিলেন নারী।
উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের প্রধান ইয়েও সাং ইয়ুন বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করা অত্যন্ত সহজ। কারণ, তারা পুরুষের মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কারখানায় কাজ করেন না। ফলে তাদের দৈনন্দিন নজরদারির মধ্যে থাকতে হয় না।
চীনা সরকারের এক মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, চীনে অবস্থিত সকল বিদেশির অধিকার রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ সমপূর্ণ সচেতন। কিন্তু কেএফআইর দাবি, চীনা সরকার সত্যিকার অর্থে উত্তর কোরিয়া থেকে আসা নারী ও শিশুদের রক্ষায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
লি যখন চীনে পৌঁছান তাকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়ানজি শহরের একটি ভবনের ৪র্থ তলায় থাকতেন তিনি। এই শহর থেকে উত্তর কোরিয়া খালি চোখে দেখা যায়। এখানে এসে লি বুঝতে পারলেন তাকে কোনো রেস্টুরেন্টে চাকরি দেয়া হচ্ছে না এবং তাকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু একটি দক্ষিণ কোরিয়ান সংস্থার সাহায্যে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান লি। সংস্থাটি প্রতি মাসে তার মতো প্রায় ১০ জনকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আশ্রয় দেয়ার জন্য কাজ করে। প্রথমে তাদেরকে নিজস্ব উপায়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে তাদেরকে ১০ দিন বিভিন্ন প্রশ্নের জন্য রাখা হয়। সেখান থেকে তাদের সকল বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশের জন্য বৈধতা দেয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় তারা ৩ মাস নানা প্রশিক্ষণ পান। এরপর তাদেরকে দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া, ভর্তুকিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়াশুনার সুযোগও রয়েছে তাদের। লি জানিয়েছেন, তিনি এখন ইংরেজি ও চাইনিজ শিখতে চান। পড়াশুনা শেষে তার লক্ষ্য একজন শিক্ষক হওয়া।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর