দেখতে দেখতে শেষ হলো ঈদ উৎসব। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও শেষ করলো তাদের ঈদ আয়োজন। ঈদ উৎসব শেষ হলেই প্রশ্ন ওঠে টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদ আয়োজন নিয়ে। কোন চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান কেমন ছিলসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনা-সমালোচনায়। ঈদে দর্শকের চোখ বরাবরই বেশি থাকে নাটকের দিকে। টিভি চ্যানেলগুলো সপ্তাহব্যাপী ঈদ আয়োজনে প্রতিদিনই একাধিক নাটক প্রচার করে। গেল কয়েক বছর ঈদের সময় খণ্ড নাটকের পাশাপাশি মিনি ধারাবাহিকের একটি ট্রেন্ড চালু করেছে চ্যানেলগুলো। এবারের ঈদেও প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে মিনি ধারাবাহিক নাটক ছিল।
বছরের অন্য সময়েই টেলিভিশনের ধারাবাহিকগুলো দর্শক টানতে পারে না বলে অনেকে মন্তব্য করেন। সেখানে ঈদের সময় এই ধারাবাহিকগুলোকে দর্শক কীভাবে নিচ্ছে সেটি ভাববার বিষয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদে প্রচার হওয়া ধারাবাহিকগুলো দু’তিন পর্বের পর দর্শক আর দেখে না। কারণ ঈদের সময় বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া কিংবা টিভি ছাড়াও অন্য কোনো মাধ্যম থেকে বিনোদন নেয়ায়ও ব্যস্ত থাকেন দর্শকরা। এদিকে দর্শক খণ্ড নাটক নাকি মিনি ধারাবাহিক বেশি দেখছে এ নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে। এই সময়ে টেলিভিশনে নাটক প্রচারের পর সেটি আবার চলে আসছে ইউটিউবে। গেল দুই বছর ইউটিউবে যে নাটকগুলো আলোচনায় এসেছে সেগুলোর সবই খণ্ড নাটক। একক নাটকের পাশাপাশি ঈদে কেন এত ধারাবাহিক প্রচার করতে হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে বৈশাখী টিভি’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক টিপু আলম মিলন বলেন, ঈদে ধারাবাহিক প্রচারের কারণ হলো ব্যবসায়িক একটি পলিসি। একটি সিঙ্গেল নাটক একবার প্রচারেই শেষ। একটি সিঙ্গেল নাটকের ডাবল বাজেট দিয়ে একটি মিনি ধারাবাহিক আমরা ৭ দিন প্রচার করতে পারছি। ফলে আমাদের বাজেটও সেইভ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে নির্মাতাদের চেয়ে চ্যানেলগুলোই লাভবান হচ্ছে বেশি। এবার ঈদে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদের দু’টি ধারাবাহিক নাটক ছিল। ঈদের ধারাবাহিক নিয়ে তিনি বলেন, দর্শক ঈদে খণ্ড নাটক-টেলিছবি বেশি দেখে বলে আমি মনে করি। কারণ আমরা সবাই এখন অনেক ব্যস্ত থাকি। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কারো নাটক দেখার সুযোগ হয় না। কোনো দর্শক ধারাবাহিক নাটকের একটি পর্ব দেখতে না পারলেই পরবর্তীতে সেই নাটকের স্বাদ ভালোভাবে পায় না। অবশ্য কিছু কিছু নাটকের ক্ষেত্রে এমনটার ব্যতিক্রম হয়। ঈদে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে বরাবরই বেশ মুন্সিয়ানা দেখান নির্মাতা সাগর জাহান। এবার ঈদে তার ‘সৌদি গোলাপ’ ও ‘তালমিছরি না হাওয়া মিঠাই’ ছিল নতুন ধারাবাহিক। এর আগে ‘আরমান ভাই’, ‘সিকান্দার বক্স’, ‘অ্যাভারেজ আসলাম’ ও ‘ফ্যাটম্যান’ সিরিজগুলো নির্মাণ করে তিনি দারুণ সাড়া ফেলেন। ঈদের ধারাবাহিক নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটাকে পজেটিভলি দেখছি। আমাদের টিভি ধারাবাহিকের প্রতি দর্শকদের আগের মতো আগ্রহ নেই। এই ক্ষেত্রে ঈদের ধারাবাহিকগুলো অনেকটা তার বিপরীত। ঈদের ধারাবাহিকগুলোর প্রতি দর্শকের আগ্রহ অনেক বেশি। বিশেষ করে আমি যে ধারাবাহিকগুলো নির্মাণ করেছি তার সবক’টিই দর্শকরা নিয়েছেন। অন্যদের ধারাবাহিকগুলোও দর্শকরা দেখছেন। নির্মাতা হিসেবে ঈদের ধারাবাহিক নির্মাণে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের এই নাটকগুলোর জন্য ভালো একটা বাজেট পাওয়া যায়। ঈদের ধারাবাহিক দিয়ে চ্যানেলও তার দর্শক ধরে রাখতে পারে কিছুদিন। এছাড়া এখন সব নাটক চ্যানেলে প্রচারের পর ইউটিউবে দেখা যায়। কোনো একটি পর্ব দর্শক টিভিতে দেখতে না পারলে সেটি ইউটিউবে দেখছে। এদিকে নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারের ঈদে বেশ কিছু সিঙ্গেল নাটক দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। কারণ সিঙ্গেল নাটক এক দেখাতেই দর্শক শেষ করতে পারছেন। ধারাবাহিক নাটকও দর্শক দেখছেন। তবে সেটি সিঙ্গেল নাটকের মতো দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলছে না।