× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার সুদূরপরাহত

বিশ্বজমিন

মীনাক্ষি গাঙ্গুলি
(৪ বছর আগে) জুন ১২, ২০১৯, বুধবার, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন নিখোঁজ হন কল্পনা চাকমা। সম্প্রতি বাংলাদেশে যেসব জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মাঝে মাঝে এটাকে প্রথম গুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২৩ বছর আগে কল্পনা ও তার দুই ভাইকে তাদের রাঙামাটির বাড়ি থেকে খুব ভোরে চোখ বেঁধে, হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার দুই ভাই পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তারা পুলিশে এ বিষয়ে রিপোর্ট করেন। তারা বলেছেন, অপহরণকারীদের চেনেন তারা। এর মধ্যে রয়েছেন একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দু’সদস্য । গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী হলো আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সহায়ক অংশ।
 
ওই সময় কল্পনা চাকমার বয়স ছিল ২৩ বছর। তিনি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের আত্মমর্যাদার বিষয়ে পরামর্শদাতা একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম হলো উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার।

কল্পনা চাকমা গুমের বিষয়ে তদন্ত ও রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ওই অনুসন্ধানের বিষয়ে কখনোই কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি। যদিও কল্পনাকে অপহরণের দিনেই তার ভাইয়েরা পুলিশে রিপোর্ট করেছিলেন, কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ১৪ বছরেও তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে পারে নি। ওই তদন্ত নিষ্পত্তিমূলক ছিল না। ২০১৬ সালে রাঙামাটি পুলিশ আদালতের কাছে আবেদন করে তথ্যপ্রমাণের অভাবে এই মামলাটি বন্ধ করে দিতে। কল্পনার পরিবার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতে অনাস্থা প্রকাশ করে আবেদন করে। কিন্তু শুনানি বার বার বিলম্বিত করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশে সমালোচক ও অধিকারকর্মীদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনা বিরক্তিকরভাবে একটি কমন বা সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সুপরিচিত সংগঠন অধিকার-এর মতে, শুধু ২০১৮ সালে আইন প্রয়োগকারীরা জোরপূর্বক গুম করেছে ৯০ জনকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী উপজাতিদের অধিকারকর্মী মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হয়েছেন ৯ই এপ্রিল। তার পরিবার ও অধিকার বিষয়ক সহকর্মীদের আশঙ্কা, কল্পনার মতো তিনিও জোরপূর্বক গুমের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
 
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জোরপূর্বক গুম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমন গুমের শিকার ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমন কি তার পরিণতি অথবা তুলে নেয়ার পর ওই ব্যক্তি কোথায় আছেন তা জানতে দেয়া হয় না।

কল্পনা চাকমা, মাইকেল চাকমা ও ২০১৩ সালে থেকে যেসব মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন তাদের বিষয়ে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। গোপনে বন্দি রাখার কয়েক মাস পরে সম্প্রতি কিছু মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে এবং বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

(মীনাক্ষি গাঙ্গুলি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর