× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শুরুতে বেকায়দায় মুমিন চৌধুরী

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ জুন ২০১৯, শনিবার

শুরুতেই বেকায়দায় পড়েছেন কানাইঘাটের আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী। তার উপজেলার ৯ চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এরই মধ্যে তারা মাসিক সমন্বয় সভাও বয়কট করেছেন। তবে- মুমিন চৌধুরীও তার সিদ্ধান্তে অটল। বলেছেন- দুর্নীতি কিংবা অপরাধ করলে তার পক্ষে তিনি অবস্থান নেবেন না। কেউ চাল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে তার পক্ষেও তিনি থাকবেন না। এদিকে- যতই সময় গড়াচ্ছে এই ঘটনায় কানাইঘাটে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। নানা ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগও আব্দুল মুমিন চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
কৃষক লীগের উপদেষ্টা আব্দুল মুমিন চৌধুরী। দুবাইয়ে তিনি একজন ব্যবসায়ী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। কৃষকলীগের রাজনীতির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর গত দু’দফা জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের কাছে সিলেট-৫ আসনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। সর্বশেষ এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে এমপি হয়েছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার।

এদিকে- উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই আব্দুল মুমিন চৌধুরী উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার লবিং শুরু করেন। এমপি পদে মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা নির্বাচনে কানাইঘাট উপজেলা থেকে নৌকার টিকিট পেয়ে যান তিনি। তবে তার সঙ্গ ছাড়েননি কানাইঘাটের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ। নির্বাচনে পলাশও বিদ্রোহী প্রার্থী হন। নৌকার প্রার্থী হওয়ার কারণে আব্দুল মুমিন জয়লাভ করে কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হয়ে শপথ নিলেও মেয়াদ শেষ না হওয়ার কারণে তিনি চেয়ারে বসতে পারেননি। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দায়িত্ব নেন।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন- ঈদের আগে তারা কানাইঘাটের ৯টি ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ পান। উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামও তার ইউনিয়নে বিতরনের জন্য চাল পান। ইউনিয়নের আয়তন বড় হওয়ার কারনে তিনি প্রতি বছর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ও চার কিলোমিটার দূরের স্থানীয় নয়াবাজারে আরো তিনটি ওয়ার্ডের চাল বিতরণ করেন। ঈদের দুদিন আগে ৫০ কেজি চাল বিতরণের জন্য চেয়ারম্যান ফখরুল সহ স্থানীয় মেম্বাররা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ওই চাল আটকিয়ে দেয় এবং চাল বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তারা প্রচার করে। এ সময় তারা এলাকার লোকজনকে জড়ো করে ফেলে। পরে কানাইঘাট থানা পুলিশ গিয়ে ওই চাল উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এদিকে- এ ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে আসামি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা থানায় মামলা করেন। কানাইঘাটের ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরীর সহযোগিতা কামনা করেন। এ অবস্থায়, তারা একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে উপজেলা পরিষদের জরুরি সভা আহবানের অনুরোধ জানান। কিন্তু তাদের কথা রাখেননি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন। তিনি চেয়ারম্যানদের বিরোধিতা করে স্থানীয় প্রশাসনের কথা মেনে চলেন। এ কারনে তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। গত বৃহস্পতিবার কানাইঘাট উপজেলার পরিষদে সমন্বয় সভা আহবান করা হয়েছিল। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার পরিচালনায় সভায় বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও কোন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত হননি।

বরং তারা কানাইঘাটের নানকার চেয়ারম্যানের বাংলোয় বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- এই অদক্ষ উপজেলা চেয়ারম্যান দিয়ে তারা চলতে পারবেন না। এ ঘটনায় তারা লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানান। কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন- অতীতে যারা উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তারা বিজ্ঞ ছিলেন। এসব ঘটনায় তারা অভিভাবকের ভূমিকা রাখেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে তার অদক্ষতার প্রমাণ দেখিয়েছেন। আমরা জরুরি সভার আয়োজন করে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছিলাম।

কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান কোনো সাড়া দেননি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা চেয়ারম্যান মুমিন চৌধুরী বলেন, রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ভিজিএফ’র চাল আটক নিয়ে তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তারপরও আমার পরিষদের চেয়ারম্যানরা সমন্বয় কমিটির সভায় যদি এ কারনে অনুপস্থিতি হয়ে থাকেন তাহলে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান। স্থানীয় এমপি হাফিজ আহমদের কথা মতো তিনি এই নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করছেন বলে দাবি করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকির জানিয়েছেন- ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থিত না হওয়ায় তিনি কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন। শিগগিরই এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মুমিন চৌধুরীর উপস্থিতিতে বৈঠক বসে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা হবে। এবং গতি নিয়েই চলবে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর