× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জ্বালানি দক্ষতায় নেতৃত্ব দেয়া উচিত বাংলাদেশের

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) জুন ১৫, ২০১৯, শনিবার, ২:৪৭ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিদ্যুত সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে এখানে বিদ্যুত সঙ্কট ছিল সবচেয়ে খারাপ। রিপোর্ট বলছে, ২০১৪ সালে এক ‘ব্লাকআউটে’ ১০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি। এখানে রয়েছে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠী। এ অবস্থায় দেশটি সব সময়ই উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, এর ফলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থা মোকাবিলায়, বিদ্যুত চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মিটাতে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে বাংলাদেশ। এখানকার বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করেছে বৃটেন, চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো। দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে।
এই যখন অবস্থা তখন বিশ্বজুড়ে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আর বাংলাদেশ মনোযোগ দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির দিকে। কিভাবে ২০২১ সালের মধ্যে পুরো দেশবাসীর কাছে বিকল্প পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহ বিদ্যুত পৌঁছে দেবে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকার নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) শতরূপা বড়ুয়া। এখানে তা তুলে ধরা হলো-

ভিওএ: ২০১৮ সালে বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সামিটে আপনি বক্তব্যে বলেছিলেন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হলে বড় যে দুটি বিষয়ে অধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে তা হলো বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়ন। এটা অর্জনের জন্য এখন পর্যন্ত আপনারা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
উত্তর: ২০০৯ সাল থেকে আমরা বিদ্যুত উৎপাদন বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে ২০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছি। এসব প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই ২০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অর্ধেক এসেছে বেসরকারি খাত থেকে। আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এখানে আসতে এবং আমাদের বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছি। আভ্যন্তরীণ অথবা বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো বহুজাতিক এজেন্সির কাছ থেকে বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করা থেকে আমরা সরে এসেছি। আমাদের সরকার এক্ষেত্রে মার্কেট ও জড়িত বেরসরকারি খাতের দিকে হাত বাড়িয়েছে, বিশেষ করে বিদেশী কোম্পানিগুলোর দিকে, যারা বিভিন্ন বিদ্যুত বিষয়ক প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে।  উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে, আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্স কাউন্সিল। তাদের কাজ হলো প্রযুক্তিগত সমাধানের উন্নয়ন করা, যেসব প্রযুক্তি হবে পরিবেশবান্ধব। এই কাউন্সিল আরো গবেষণা ও টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্ভাবন অনুমোদন করে।

ভিওএ: ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা আছে ১৮০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে তা ৬০০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য আছে আপনাদের। কিন্তু এই ৬০০০০ মেগাওয়াটের মধ্যে কতটুকু হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি?
উত্তর: আমি বলবো শতকরা ১০ ভাগ একটি ভাল টার্গেট। আমরা ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করছি। আধুনিকায়ন করে এখান থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা যেতে পারে।  আমরা দেশের ৫ থেকে ৬টি স্থানে উইন্ড এনার্জি টার্বাইন ব্যবহারের সম্ভাব্যতার দিকে যাচ্ছি এবং এক্ষেত্রে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাবনা আহ্বান করেছি।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে বাসাবাড়িতে। এমন বাড়ির সংখ্যা ৬০ লাখের ওপরে। এই সংখ্যাকে প্রতিটি বাড়ির ৫ জন সদস্য দিয়ে গুন করুন। তাহলে আপনি পাবেন তিন কোটি মানুষ। তারা সৌরবিদ্যুত পাচ্ছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এসব সৌর বিদ্যুত গৃহস্থালির কাছে ব্যবহার হচ্ছে। ব্যক্তিবিশেষের বাড়িতে বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুতের ছোট ছোট প্যানেল। এসব বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয়। ফলে এর ব্যবহারকারীদের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। আমি মনে করি, এভাবে এই রুটের মাধ্যমেও আমরা যতদূর সম্ভব এগিয়েছি। ভারত, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে আমাদের জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডের সঙ্গে তাদের জাতীয় গ্রিডের সংযুক্তির একটি সম্ভাব্যতা আমরা খুঁজছি। নেপাল এবং ভুটানের রয়েছে বড় আকারে পানিবিদ্যুত বিষয়ক বড় বড় প্রকল্প। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা বিদ্যুত উৎপাদন হতে পারে। আর সেই বিদ্যুত আমাদের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের জাতীয় গ্রিডের সংযুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশে।

ভিওএ: ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাতে বাংলাদেশের উপকূলে অফসোর ব্লকগুলোতে মজুদ হাইড্রোকার্বন উত্তোলনের যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করবে অথবা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের সঙ্গে বিনিয়োগ করবে। এ বিষয়ে আমরা এখন কোন অবস্থায় আছি?
উত্তর: নতুন অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো। আমাদের কাছে এসেছে মোবিল। তারা আমাদের দেশের উজান ও ভাটিতে হাইড্রোকার্বন শিল্পে তাদের আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবো এবং গভীর সমুদ্রে (মজুত থাকা হাইড্রোকার্বন) অনুসন্ধানের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করতে বলবো।

ভিওএ:  বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খাতে আর কি কোনো এলাকা আছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অথবা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করার সম্ভাব্যতা রয়েছে?
উত্তর: সম্প্রতি আমরা জেনারেল ইলেকট্রিক ও তাদের স্থানীয় অংশীদারের সঙ্গে ২০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত দেয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছি। আমরা সামিট পাওয়ার এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গেও একটি চুক্তি করেছি ৫৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বিপুল আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা আশা করছি, তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসবে।
আর অ্যান্ড ডি (রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)-এর প্রতিও আমাদের আশা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের কিছু সহযোগিতা রয়েছে। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্স কাউন্সিল থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে দেশে ফিরে আমাদের প্লাটফরমে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আহ্বান জানিয়েছি তাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ দিতে। মার্কিন শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নেয়া হতে পারে গবেষণায়।

ভিওএ: আপনার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারে রয়েছে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের কাছে ‘নিরাপদ নেটওয়ার্ক’ পৌঁছে দেয়া। বেশি ভাগ মানুষের কাছে সাধ্যের মধ্যে গ্যাস পৌঁছে দিতে আপনারা ভর্তুকি দিচ্ছেন। নিকট ভবিষ্যতে কি আস্তে আস্তে এই ভর্তুকি তুলে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে আপনাদের?
উত্তর: আমরা গ্রামে গ্রামে কম দামে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়েছি। আমরা এক্ষেত্রে বিষয়টিকে ভর্তুুকি হিসেবে দেখি না। আমরা এটাকে অধিক ‘হিউম্যান ক্যাপিটালে’ বিনিয়োগ হিসেবে দেখি। বিদ্যুত গ্রামীণ পরিবেশে জীবন পাল্টে যাওয়ার একটি উপাদান। এতে শিক্ষা, ক্ষুদ্র মাপের উৎপাদন ও বয়স্কদের দেখাশোনা করায় সহায়ক হচ্ছে। এতে নবজাতকদের মৃত্যুহার কমে যাবে। মাতৃ মৃত্যুহার কমে যাবে। এটাকে দেখা হয় সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে।

ভিওএ: শেষ করার আগে, আমি জানতে চাই, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? আপনি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে, ধরুন পরবর্তী ২০, ৩০ বছরে কেমন দেখতে চান?
উত্তর: খুবই ভাল কথা। আমি দেখতে চাই প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। বিদ্যুতে দক্ষতায় আমাদের নেতৃত্ব দেয়া উচিত। জ্বালানি সংরক্ষণে আমাদের নেতৃত্ব দেয়া উচিত। জ্বালানি ইস্যুতে দায়িত্ববোধে আমাদের নেতৃত্ব দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী যে বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন তা হলো দায়িত্ববোধ। বিদ্যুত ব্যবহারে আমাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুত খরচ করুন। সামর্থ্য থাকলেই অধিক বিদ্যুত খরচ করবেন না।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর