বিএনপির হাই কমান্ডের দেয়া আশ্বাসের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে দুপুর একটার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। তবে আজ সোমবার যথাসময়ে আবারো বিক্ষোভ করবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বয়সসীমা তুলে দিয়ে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে তারা এই আন্দোলন করছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়া জেলে কেনো সিন্ডিকেট জবাব দে; সিন্ডিকেট ছিলো কোথায় ম্যাডাম যখন জেলে গেল; মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’- সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই- আমরা আপনার নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ আস্থাশীল। আমাদের ত্যাগ স্বীকারকে মূল্যায়ন করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান দিন।’ তিনি বলেন, যতো দিন পর্যন্ত এর সমাধান না আসবে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচিও চলবে। সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক বলেন, আমরা বয়সের সীমারেখা উঠিয়ে দিয়ে ৬ মাসের জন্য একটি কমিটি চাই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দলীয় চ্যানেলে যেহেতু সঠিক বার্তা পৌঁছানো যাচ্ছে না সেহেতু পার্টি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে তার কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরছি। যাতে গুম ও জেলজুলুমের শিকার নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পায়। আশাকরি, তিনি আমাদের মেধা, শ্রম ও ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন।
এর আগে বয়সের সীমা না রাখা, স্বল্পমেয়াদি কমিটি গঠনসহ তিন দফা প্রস্তাবনার ভিত্তিতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে সংগঠনের বিলুপ্ত কমিটির একাংশের নেতারা। পরে ওইদিন রাতেই সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির সদস্যদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেন বিক্ষুব্ধরা। পরবর্তীতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে তারা সার্চ কমিটির সদস্য ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। দাবি পূরণে তারাও পুনরায় আশ্বাস দেন আন্দোলনকারীদের। কিন্তু দাবি পূরণে কার্যত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাবি পূরণে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে তারা আলোচনাও চালিয়ে যাবেন।  
এদিকে গতকাল ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতারাও সকাল থেকে কার্যালয়ের ভেতর অবস্থান করেন। তবে, অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ করে আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ- সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে সার্চ কমিটি ও পরে সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এবং তাদের সম্মানার্থে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করি। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার। আমাদের দাবি নতুন কমিটি দিতে হবে। বয়সের সীমারেখা তুলে নিতে হবে। ২০০০ সালের আগে যাদের এসএসসি তাদেরসহ একটি স্বল্পকালীন কমিটি দিতে হবে। আমাদের দাবি আদায়ে শতভাগ আশাবাদী। তবে দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
জানা গেছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য বিএনপির বিভিন্ন উপ-কমিটি ও দুই অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। পাশাপাশি ছাত্রদলের কাউন্সিলের যাবতীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গত ৩রা জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। অন্যদিকে, কাউন্সিলে প্রার্থী হতে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়াসহ তিনটি শর্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়।