× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিআরটিসি বাস চলাচল নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যে উত্তেজনা

দেশ বিদেশ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৭ জুন ২০১৯, সোমবার

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসির বাস চলাচল নিয়ে উত্তেজনা চলছে। ‘লোকাল রুটে’ বিআরটিসি বাস চলবে না- এমন দাবিতে অনড় সিলেটের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ওই রুট থেকে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করতে ২৪শে জুন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সিলেট বিভাগে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। আর এই ধর্মঘটকে অনৈতিক দাবি করে গতকাল সিলেটস্থ সুনামগঞ্জবাসীর ব্যানারে অনাস্থা প্রাচীর পালন করা হয়। এই পরিবহন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলতে তারা সবার প্রতি আহ্বান জানান। গত ঈদুল ফিতরের আগে ৩রা জুন থেকে হঠাৎ করে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ১২টি বাস নিয়ে সুনামগঞ্জের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার ভাইয়ের নেতৃত্বে ওই সার্ভিস চালু করা হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী ইমদাদুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাস সার্ভিস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এদিকে- বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর প্রতিবাদ করেন ওই রুটে চলাচলকারী পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা। তারা ঈদের আগেই সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। অবশ্য পরে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঘোষণার দিনই তারা পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করেন। কিন্তু ঈদের পরে পুনরায় ওই রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন সিলেট জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল বিকালে জেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম চেয়ারম্যান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট থেকে দূরবর্তী স্থানে ডিপো টু ডিপো বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। এতে কেউ বাধা প্রদান করছেন না। কিন্তু হঠাৎ করে সুনামগঞ্জের এক নেতার ভাইয়ের নেতৃত্বে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস চালু করা হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এ কারণে তারা ঈদের পরে বৈঠক করে আগামী ২৪শে জুন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সিলেট বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল তারা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এভাবে বিআরটিসি বাস সব রুট দখলে নিলে পরিবহন মালিক ও চালকরা কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। এদিকে- গতকাল সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে আশানুরূপ কোনো ফলাফল আসেনি বলে জানা গেছে। এদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনৈতিক ধর্মঘট আহ্বানের প্রতিবাদে এক গণ অনাস্থা প্রাচীর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনাস্থা প্রাচীর অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক আল আজাদের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা এম. রশীদ আহমদ এবং সঞ্জয় চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় গণ-অনাস্থা প্রাচীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হায়াতুল ইসলাম আখঞ্জি, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাস পুরকায়স্থ, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, শামসুল বাছিত শ্যারো, রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক খছরুজ্জামান, মুক্তাদির আহমদ মুক্তার, তৌফিকুল আলম, ইয়ামিন চৌধুরী, আফজাল হোসেন, দেবাংশু দাস মিঠু, অ্যাডভোকেট রিপা সিনহা, মিজানুর রহমান জিতু, সজল সরকার, কবিরুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, প্রভাষক সুয়েবুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের সিলেটের এজিএম মো. সুজাদুল হক, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট অনন্ত দাস, পীযূষ পুরকায়স্থ, এনামুল হক লিলু, কাশমির রেজা, কনক পাল অরূপ, ওবায়দুল হক মিলন, ফেরদৌস আলম, ঝুটন পাল, হারুনুর রশীদ, আবু সালিম, মাওলানা শুয়াইব, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুব চৌধুরী, সাজিদুর রহমান সাজু, রুকন আল রুহান প্রমুখ। একাত্মতা পোষণ করে গণ-অনাস্থা প্রাচীরে বিভিন্ন সংগ্যঠনের মধ্যে অংশগ্রহণ করে সিলেটস্থ দিরাই ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, জামালগঞ্জ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, তাহিরপুর ছাত্র পরিষদ, বিশ্বম্ভরপুর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, মধ্যনগর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, দিরাই শালা যুব কল্যাণ পরিষদ, তাহিপুর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ। সভায় বক্তারা বলেন, ‘আমরা পরিবহন সেক্টরের এহেন কর্মসূচির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বক্তারা বলেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকরা অহেতুক ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। তাই এদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ ২০০৪ সালে যাত্রী সেবা বাড়াতে একইভাবে সিলেট-তামাবিল সড়কের জাফলং পর্যন্ত বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। তখন বিআরটিসি বাসের পক্ষে ছিলেন জৈন্তাপুরের ১৭ পরগনার বাসিন্দারা। আর বাস চালু বন্ধের পক্ষে ছিলেন সিলেটের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ওই সময় সিলেটে এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা গতকাল জানিয়েছেন, সিলেট সুমাগঞ্জ সড়কে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস চলাচল করে। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াও বেশি  নেয়। পাশাপাশি বাস চালনায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা হয়। এ কারণে ওই রুটে বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা। এই ভোগান্তি ও জিম্মি দশা কাটাতে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে এই সার্ভিসকে স্বাগত জানিয়েছে যাত্রীরা। এ কারণে শুধু সিলেটেই নয়, সুনামগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ সড়কে কমিটি করে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু রাখার দাবি জানাচ্ছে এলাকার মানুষ। তারা ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে অবস্থান নিচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর