একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলেও পরাজিত হয়েছে গণতন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঠাকুরগাঁওয়ে চারদিনে সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালে হরিপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মীসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। কিন্তু আমরা ব্যালটে বিশ্বাস করি। অবস্থা বিচার করে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছিলাম। এই বারের কারচুপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছে। কিন্তু গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, একাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সংসদ একটি অবৈধ সংসদ। এই সংসদের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের  যে আমরা জনগণের অধিকার রক্ষা করতে পারিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব টাকা লুটেরাদের পকেটে যাবে। ধনীরা আরো ধনী হবে। গরিবরা আরো গরিব হবে। এবারের বাজেটের আয়ের বেশিরভাগ অর্থ যাচ্ছে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। তাদের গাড়ি, অনুদানসহ সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের কথা ভাবা হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের মুখে হাসি নেই। কারণ বড়লোকদের জন্য যে বাজেট, তাতে তারা ঋণ করে আরো বড়লোক হবে। এ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে। মানুষকে সকল অন্যায়-অবিচার থেকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন দল হয়ে পড়েছে। সরাসরি একদলীয় শাসন কায়েম না করে সংসদকে ব্যবহার করে একদলীয় ব্যবস্থা চালাচ্ছে। কথায় কথায় বলা হয় ন্যায় বিচার কিন্তু কোথায় ন্যায় বিচার? দেশে আজ অরাজকতা, সমাজে বিশৃঙ্খলা, খুন, ধর্ষণ আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বন্দুক আর বুটের নিষ্পেশন দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না। তাই বিএনপি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধারক সরকারের অধীনে আবারো নির্বাচন আদায় করে নেবে। হরিপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আজগর আলীর সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ে যৌথ কর্মী সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনোয়ারুল হক, হরিপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ ইসমাঈল হোসেন, জেলা বিএনপি’র সদস্য ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রেজুয়ানুল হক বিশ্বাস, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোতালেফ হোসেন, মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা পারভীন প্রমুখ। এর আগে রোববার রুহিয়া আব্দুর নুর চৌধুরী মিল-চাতলে এক কর্মী সভায় মির্জা আলমগীর বলেন, কৃষকরা ধানের দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। শ্রমিকরা পাচ্ছে না ন্যায্য মজুরি। কিন্তু সরকারের তাদের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের ন্যূনতম বেঁচে থাকার উপায় নেই। অথচ তারা গণবিরোধী বাজেটের মাধ্যমে মেগা প্রকল্প চালু করে লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরানো নিয়ে ব্যস্ত আছেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নিজের জন্য কারারুদ্ধ হননি। তিনি দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তিনিই বিএনপি’র অত্যাচারিত নেতা-কর্মীদের বড় অনুপ্রেরণা। সীমান্তে বিএসএফের অন্যায়ভাবে বাংলাদেশীদের হত্যার প্রতিবাদ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিককালে বিজিবি-বিএসএফ’র মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে প্রকারান্তরে বিএসএফ মহাপরিচালকও স্বীকার করেছেন এ হত্যাকাণ্ড আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। এরজন্য বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করে বলেন, আসলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়, বরং এ সরকার প্রতিটি প্রশ্নেই ভারতকে ছাড় দিচ্ছে। সংগঠনের রুহিয়া থানা বিএনপি’র আহবায়ক আনসারুল হকের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমীনসহ বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এর আগে বিএনপি মহাসচিব রোববার দুপুরে ৪ দিনের সাংগঠনিক সফরে ঠাকুরগাঁও পৌঁছান। ১৯শে জুন ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।