জোড়াতালি দিয়ে আওয়ামী লীগ চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এজন্য দলে নতুন সদস্য সংগ্রহের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন কর্মী সৃষ্টি করতে হবে, কারণ কর্মীরাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ। কর্মীরাই পারে দুঃসময়ে দলকে বাঁচিয়ে রাখতে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় তিনি এ তাগিদ দেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলে অনেক সাহসী,ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা ছিলেন,যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু হারিয়ে যাওয়াদের রিপ্লেসমেন্ট কি আমরা করতে পারছি? নতুন রিক্রুটমেন্ট কি আমরা করতে পারছি? নেত্রী বার বার তাগিদ দেয়ার পরও আমরা সদস্য সংগ্রহ করিনি। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে যারা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের সদস্য হিসেবে ধারণ করতে হবে, না হলে কিছুদিন পরে তারা ভুলে যাবে। নতুন কর্মী সৃষ্টি করতে হবে, শেখ হাসিনা এক-এগারোতে কারাগার থেকে বের হতে পারতেন না যদি কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না থাকতো। ওবায়দুল কাদের বলেন,এখন যদি আমরা ক্ষমতার দাপট দেখাই তবে কেউ আমাদের মনে রাখবে না। পকেট কমিটি কারও কাজে আসবে না। আওয়ামী লীগ সুবিধাভোগীদের পার্টি নয়। দলের যখন আবার দুঃসময় আসবে তখন দেখবেন, সুবিধাভোগী, বসন্তের কোকিলদের হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ‘এই সপ্তাহে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন’ এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি বিজ্ঞ আইনজীবী। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন। যদি আদালত বেগম জিয়াকে জামিন দিতে চান তবে এটুকু বলতে পারি, সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, সরকার সবসময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শ্রীলংকার মত ঘটনা বাংলাদেশে যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সবাই যে কোন পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এ দেশে হলি আর্টিজান ঘটেছে। হলি আর্টিজানের পরে এই ঢাকা শহরের অবস্থা কি ছিল? অনেক দিন মনে হয়েছিল, যেন মরা একটা ভুতুড়ে শহর। শ্রীলংকায় যা ঘটেছে, বাংলাদেশে তা ঘটবে না এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী সংগঠন এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই হাতিয়ারই আমাদেরকে যে কোন প্রকার আঘাত, আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানান তিনি। নগর নেতাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে একটা কথা বলবো, ফাঁকি দেবেন না। জোড়া-তালি দিয়ে আওয়ামী লীগ করবেন না। দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের অবহেলা করে আওয়ামী লীগ টিকবে না। কোন স্বার্থের বশবর্তী হয়ে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করবেন না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা, তাকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে। নেত্রী নিজেকেই অতিক্রম করে গেছেন। শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর যোগ্যাতা দিয়ে, দক্ষতা দিয়ে নিজেকে অতিক্রম করেছেন। শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে, গৌরব দিয়ে, তার সৌরভ দিয়ে, তার সাহস দিয়ে, তার বিচক্ষণতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন- ‘সি ইজ লারজার দেন আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় হয়ে গেছেন। আমাদের পার্টি শেখ হাসিনার সমকক্ষ হতে পারে নি। এটা কেন? এটা কি দলীয় দূর্বলতার কারণে? সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। দলের স্বার্থে কাজ করুন, দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। সংসদে যোগ দিয়ে বিএনপি নেতাদের আবার সংসদকে অবৈধ বলার সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, নির্বাচিত সংসদকে যারা অবৈধ বলে, আদালতের রায়ই আছে তাদের (বিএনপি) জন্মই অবৈধ। এটা আমার কথা নয়, উচ্চ আদালত রায় দিয়েছে। তাদের জন্ম, তাদের সরকার গঠন সবই ছিল অবৈধ।