× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুশ্চিন্তায় সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা

প্রথম পাতা

এম এম মাসুদ
১৮ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে উৎসে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে আগের চেয়ে কম মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ  হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজেট পেশের আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারে হাত দেবেন না অর্থমন্ত্রী। সে কথা তিনি রেখেছেন। কিন্তু গ্রাহকদের মুনাফার টাকার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করে বিপদে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীদের। অর্থাৎ বর্তমানে উৎসে কর (চূড়ান্ত দায়) দিতে হচ্ছে ৫ শতাংশ, প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হলে দিতে হবে ১০ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের মতে, ১০ শতাংশ উৎসে কর ১লা জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।
যারা এখনো মুনাফার টাকা তোলেননি এবং যারা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়েই মুনাফার টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০শে জুনের মধ্যেই তা তুলে ফেলা। সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। এর ফলে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের পথ সংকুচিত হয়ে পড়বে। যেমন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে কোনো গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন, ১লা জুলাইয়ের পর থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা চলতি মাস জুনের মধ্যে না তুললেই বাড়তি কর ১০ শতাংশ দিতে হবে গ্রাহককে।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থ আইন-২০১৯-এর আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫২(ডি) ধারা সংশোধনের মাধ্যমে। ওই ধারায় সঞ্চয়পত্রে ৫ শতাংশ উৎস কর নেয়ার বিধান আছে। সেটি সংশোধন করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানতের সুদের ওপর কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিন) থাকলে ১০ শতাংশ এবং না থাকলে ১৫ শতাংশ হারে উৎস কর নেয়া হয়। ১লা জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে নতুন হারে উৎস কর কার্যকর হবে। ব্যাংকে আমানতের ওপর আরোপ করা উৎস করের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর কর বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। কারণ সঞ্চয়পত্র যারা কেনে তারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক। ফলে তাদের আয় আরো কমে যাবে।

সূত্র মতে, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান করা হয়, যা ২০১১ সালের ১লা জুলাই থেকে প্রযোজ্য হয়। তবে ২০১১ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফায় ১০ শতাংশ হারে উৎস কর কর্তনের বিধান ছিল।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় ব্যাংকে আমানতের সুদ হারও বেশি ছিল। ফলে অবসরভোগী ও সাধারণ মানুষ তাদের জমানো টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বদলে ব্যাংকে রাখত। এ পরিস্থিতির বদল করতে ওই সময় উৎস কর অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। আর ২০১৬ সালে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎস কর আদায়ের নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে। আর ব্যক্তি খাতের পেনশন স্কিম সঞ্চয়পত্রের ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ উৎস করমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ব্যক্তি খাতের পেনশন স্কিমে ৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিনিয়োগ হলেই পুরো মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎস কর আদায়ের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা নেয়ার কথা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু অর্থবছরের ৯ মাসেই ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকার বেশি নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঠেকাতে সমপ্রতি বিনিয়োগকারীদের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী ১লা জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে সঞ্চয় স্কিমগুলোর বিক্রয়, মুনাফা নগদায়ন ইত্যাদি বিষয়ে রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এনআইডির ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। গ্রাহকের মুনাফা ও আসল ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং এ খাতে সুদ বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।

এদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনার কথা নতুন বাজেটে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের কমপক্ষে প্রতি দুই মাস অন্তর সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যত বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সরকারের সুদ ব্যয়ও তত বেশি। আগামী অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সুদ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত এবং সুদের হার বেশি হওয়ায় এখানে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ বাড়ছে। সেক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হলো বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়া। এতে করে সরকারকে অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রির সুদের বোঝা টানতে হবে না।

এদিকে সরজমিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার সৈয়দা আফরোজা বেগম। বয়স ৬০ এর কাছাকাছি। তিনি বলেন, কিছু টাকা ব্যাংকে আছে। ইন্টারেস্ট পাই ৬ শতাংশ। নানান খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ পড়ে। এর চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদ অনেক বেশি। তাই সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে গ্রাহকদের মুনাফার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। তার পরও সঞ্চয়পত্র কিনবো। কারণ ব্যাংকের অবস্থা ভালো না। আস্থাও নাই বলে জানান তিনি।  
সঞ্চয়পত্রের সুদহার: সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১.৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। ৫ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১.৭৬ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১.২৮ শতাংশ। ৩ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১.০৪ শতাংশ। ৩ বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১.২৮ শতাংশ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর