× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ধরা ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৯ জুন ২০১৯, বুধবার

মানুষকে বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুল চিকিৎসা দিয়ে আসছিল ভুয়া ডাক্তার বিকিরণ বড়ুয়া। শেষে ছদ্মবেশে রোগী সেজে ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ধরা খেলেন এই ডাক্তার। প্রতারণার দায়ে পেলেন ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা।

সেই সঙ্গে আয়েশা মেডিকেল নামে ওই ডাক্তারের চেম্বারের ওষুধের ফার্মেসিতেও মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির দায়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও মালিক ফরিদুল আলমকে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয় নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ঘটে এ ঘটনা। পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান অভিযানে নেতৃত্ব দেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. মো. ওয়েজেদ চৌধুরী অভি এবং র‌্যাব ৭ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার মিমতানূর রহমানসহ র‌্যাব সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার মিমতানূর রহমান জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার বিকালে ডাক্তার বিকিরণ বড়ুয়ার কাছে চিকিৎসার জন্য রোগী সেজে এক র‌্যাব সদস্যের মাধ্যমে সিরিয়াল নেয়া হয়।
সন্ধ্যা ৬টায় চেম্বারে আসতে বলা হয় তাকে। দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয়নগরের আয়েশা মেডিকেলে তার চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় বাইরে অসংখ্য রোগীর ভিড়।
নিজেকে ডায়াবেটিস, মেডিসিন ও শিশু রোগের চিকিৎসক দাবি করা বিকিরণের চেম্বারের বাইরে বেশ কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও কয়েকটি শিশুকে দেখতে পাওয়া যায়।
মিমতানুর রহমান বলেন, রোগী সেজে প্রথমে আমি তার সঙ্গে কথা বলি। এক পর্যায়ে তার ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চাই। এ সময় বিকিরণ বড়ুয়া তার সার্টিফিকেট ঢাকায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় বাইরে অপেক্ষা করা পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি তার চেম্বারে প্রবেশ করেন এবং তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানতে চান। তিনি তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৯১১১৩ বলে উল্লেখ করেন। এ নম্বর দিয়ে বিএমডিসির ওয়েব সাইটে সার্চ করা হলে এ নম্বরের বিপরীতে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় এখন পর্যন্ত এমবিবিএস ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৯ হাজার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গত মাসে তার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং এ জন্যই তা ওয়েব সাইটে নেই বলে ব্যাখ্যা দেন। কোথা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন জানতে চাইলে তিনি ভারতের একটি মেডিকেল কলেজের নাম বলেন এবং সে মেডিকেল কলেজের বেশকিছু প্রিন্ট করা ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেন।
বিকিরণ বড়ুয়ার প্রেসক্রিপসন প্যাডে তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের মেডিকেল অফিসার বলে উল্লেখ করেছেন। কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ নামে সেখানে কোনো ডাক্তার কাজ করেন না বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

অপরদিকে যে আয়েশা মেডিকেল ফার্মেসিতে তিনি চেম্বার করতেন সে ফার্মেসি মালিককে লাইসেন্স দেখাতে বললে তার কোনো লাইসেন্স নেই বলে জানান। তার আচরণে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এবং বিকিরণ বড়ুয়া যৌথভাবে ভুয়া চিকিৎসা ব্যবসা করার কাহিনী বেরিয়ে আসে। ফার্মেসিতে তল্লাশি চালিয়ে চার বস্তা অননুমোদিত ও অবৈধ, ব্যবহার নিষিদ্ধ ওষুধ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় জমে যাওয়া আইভি সেলাইনসহ নষ্ট ও গলে যাওয়া ওষুধ। এ সময় ফার্মেসির মালিক ফরিদুল আলমকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদ- প্রদান করেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, আমরা স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছদ্মবেশে অভিযানে বের হই। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে পারি। ওই ভুয়া ডা. বিকিরণ বড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল চিকিৎসা দিয়ে আসছিলো। তার কোনো একাডেমিক সনদপত্র নেই। যার ফলে আমরা তাকে ছয় মাসের কারাদ- ও এক লাখ টাকা জরিমানা করি। পাশাপাশি আরো একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালাই। এতে অননুমোদিত ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ওই মালিককে তিন মাসের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর