কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছেন মঙ্গলবার। তৃতীয় ধাপে অনিয়মের অভিযোগে স্থগিত হওয়া এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। রাতে এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ডা. মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান (ঘোড়া) কে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ডা. মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান (ঘোড়া) এক হাজার ১০ ভোটে পরাজিত করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপী (নৌকা) কে। উপজেলার ৮৯টি কেন্দ্রের সবকটি থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ডা. মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান (ঘোড়া) ১৬ হাজার ৩৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী তানিয়া সুলতানা হ্যাপী (নৌকা) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩৭০ ভোট।
ঘোষিত এই ফলাফলের বার্তা প্রেরণ শিট স্থানীয়ভাবে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছেও এই বার্তা প্রেরণ শিট প্রেরণ করেছেন। কিন্তু সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত উপজেলায় স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা বার্তা প্রেরণ শিট এবং জেলায় প্রেরণ করা বার্তা প্রেরণ শিটের মধ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে।
দু’টি বার্তা প্রেরণ শিটে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যার দু’রকম হিসাব দেয়া হয়েছে। উপজেলায় স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪১৭ ভোট। অন্যদিকে জেলায় রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে প্রেরণ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৮৫১ ভোট। অর্থাৎ জেলায় রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে প্রেরণ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যার চেয়ে ৪৩৪ ভোট বেশি।
দু’টি বার্তা প্রেরণ শিট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দু’টি বার্তা প্রেরণ শিট-ই সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত। দু’টি বার্তা প্রেরণ শিট এ প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থীর ভোট সংখ্যা অভিন্ন থাকলেও মোট অবৈধ ভোটের সংখ্যায় গড়মিল রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট অবৈধ ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে এক হাজার ৭৩১ ভোট। অন্যদিকে জেলায় রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে প্রেরণ করা বার্তা প্রেরণ শিটে মোট অবৈধ ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে দুই হাজার ১৬৫ ভোট।
বিষয়টি সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম এর নজরে আনার পর তিনি বিষয়টিকে ‘করণিক ভুল’ হিসেবে স্বীকার করে বলেন, অবৈধ ভোটের সংখ্যায় গড়মিল হলেও বৈধ ভোটের হিসাব ঠিকই রয়েছে। উপজেলায় সরবরাহ করা বার্তা প্রেরণ শিটই ঠিক। জেলায় প্রেরণ করা শিটটি সংশোধন করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে নতুন করে পাঠানো হচ্ছে বলেও সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি উপজেলার শিটটি দেখেননি জানিয়ে জেলা থেকে তাঁর ঘোষিত এবং স্বাক্ষরিত শিটটিই সঠিক বলে জানান।
কটিয়াদী উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৬১৮ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৮২২ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।