কুমিল্লা জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ২০০৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মূল দায়িত্বে ছিলেন শামীম কবির। প্রথম দিকে তিনি তার নিকট আত্মীয় ও স্থানীয় কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে উপজেলার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট বাজারে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করেন। কিছুদিন পর সমিতিটি মুন্সিরহাট অফিসের নিবন্ধন সংশোধন করে থানা থেকে জেলা পর্যায়ের নিবন্ধন নেয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস থেকে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে শাখা অফিস করার অনুমোদন নেয়। পরে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন শামীম কবির। এভাবে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তিনশ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করার পর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান। পরে ২০১৫ সালে দূর্নীতি দমন কমিশন শামীম কবিরের নামে মানি লন্ডারিং আইনে ১২টি মামলা করে।
মানি লন্ডারিং আইনের মামলাসহ মোট ২৮টি মামলায় চার বছর পলাতক থাকার পর সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম গতকাল এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, শামীম কবির ধর্মকে পুজি করে ধর্মভীরু ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজনদের ধর্মীয় বিভিন্ন বানী শুনিয়ে তার অফিসে দাওয়াত দিত এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করত। পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র হিসাবে দাবি করত। উচ্চ মুনাফার কথা বলে সে লিফলেট, পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাত। এক লাখ টাকায় মাসে ২ হাজার আবার কখনও আড়াই হাজার টাকা দেয়ার কথা বলত। ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে আমানত সংগ্রহ করেছে। প্রথম দিকে কিছু দিন ঠিকভাবে গ্রাহকের মুনাফা পরিশোধ করেছে। কয়েক বছর লাভজনক মুনাফা পেয়ে সাধারণ মানুষ নিজের কষ্টার্জিত টাকা ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এ জমা রাখতো। অধিক মুনাফার আশায় কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে টাকা পয়সা ধার করে এনে, জমি বিক্রি করে সমিতিতে টাকা রাখতো। কোন কোন সরকারি বেসরকারি কর্মচারী পেনশনের টাকা দ্বিগুন-তিনগুন করার জন্য জমা রাখে। বিভিন্ন রকম ছলচাতুরী প্রয়োগ করে শামীম কবির ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ২৫ টি অফিস খুলে আমানত সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রাখে।
মোল্যা নজরুল বলেন, আসামি শামীম কবির সহ মামলার অন্য আসামিগণের সহায়তায় পরসস্পর যোগসাজসে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকদের তিন শত কোটি টাকা আত্মসাত করে ২০১৩-১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপন করে। প্রচার করতে থাকে সে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। আসামি শামীম কবিরের তথ্য মতে, আত্মসাতকৃত বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে তার নিজ গ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর থানা এলাকায় প্রাসাদসম বাড়ি, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার, গাজীপুরের কালিগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানা, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্লট, ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমান ভু-সম্পত্তি করেছে। সে তার নামে চার হাজার একর জমি করেছে। দুদক কর্তৃক ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) (৩) ধারায় ১৩টি মামলা রুজু করে যা বর্তমানে সিআইডি কর্তৃক তদন্তাধীন আছে।
শামীম কবিরের (৪৫) বাড়ি চৌদ্দগ্রামের পোটকরা গ্রামে। সে ওই এলাকার মৃত আলী আক্কাসের ছেলে। তাকে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি নোহা মাইক্রোবাস, দুইটি মোবাইলফোন সেট, একটি পাসপোর্ট, ১ হাজার ২০০ শতাংশ জমির ২৯টি দলিল, চারটি চেক বই জব্দ করা হয়েছে। সিআইডিসূত্র জানিয়েছে, শামীম কবিরের নামে কুমিল্লা সদর দক্ষিন মডেল থানায় তিনটি মামলা, মনোহরগঞ্জ থানা, লাঙ্গলকোট থানা, লাকসাম থানা, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থানায় ৫টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা, দাউদকান্দি থানা, ঢাকার রমনা থানাসহ মোট ২৮টি মামলা রয়েছে।