টিভি নাটকে নেই আগের মতো দর্শক। বলা যায়, এ সময়ে দর্শক খরায় ভুগছে দেশের টিভি নাটক। কিন্তু কেন এই খরা-এমন প্রশ্ন এখন জারালো হয়ে দেখা দিয়েছে আমাদের নাট্যনির্মাতা, অভিনয় শিল্পী ও দর্শকের কাছে। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন একাধিক নাটক প্রচার হয়। এসব নাটকের বেশির ভাগই উপেক্ষা করে দর্শক ভারতীয় সিরিয়াল দেখে। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলেও টিভি দর্শকেরা বর্তমানে ভারতীয় সিরিয়ালে আসক্ত। প্রশ্ন থেকে যায়, এমন কি আছে তাদের নাটকে যা আমাদের নাটকে নেই? আমাদের দেশে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব বেড়েছে অনেক। সংবাদপত্রে এমন খবরও প্রকাশ হয়েছে যে, মা ব্যাপক মনোযোগ দিয়ে ভারতীয় সিরিয়াল দেখছেন। আর অন্যদিকে তার শিশুসন্তান বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে।
কিন্তু তার প্রতি মায়ের কোনো খেয়াল নেই। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, যে কারণে দর্শক হারাচ্ছে দেশের টিভি নাটক তার জন্য কে দায়ী? একটা সময় আমাদের টিভি নাটকের দর্শক ছিল পার্শ্ববর্তী দেশেও। কিন্তু এখন তার বিপরীত চিত্র। এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নির্মাতা ও অভিনেতা মামুনুর রশিদ বলেন, বিটিভিতে প্রচারিত নাটকের কথা এখনো দর্শকের মুখে মুখে শোনা যায়। সেই সময় বিটিভির একটি নাটকে অভিনয় করেই আজকের অনেক শিল্পী তারকাখ্যাতি লাভ করেছেন। আমাদের স্যাটেলাইটের শুরুতেও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে দর্শক অনেক ভালো ভালো নাটক দেখেছে। গেল কয়েক বছরে আমাদের টিভি নাটকের মান কমতে শুরু করেছে। যার কারণে দর্শক ভারতীয় সিরিয়ালে ঝুঁকে পড়েছে। এই মান কমে যাওয়ার পিছনেও বেশ কিছু কারণ আছে। এরমধ্যে একটি হলো বাজেট। এছাড়া ভালো নির্মাতা ও রচয়িতাও এখন আগের মতো নেই। এই সময়ের বেশ কয়েকজন তরুণ নির্মাতা ভালো নাটক নির্মাণ করছেন। তবে তারা আমাদের নাটকের ঐতিহ্যের বাইরে সেসব নির্মাণ করছেন। এই সময়ে নাটকে পারিবারিক গল্প পাওয়া যায় না। দর্শক কিন্তু পারিবারিক গল্পের নাটক দেখতে পছন্দ করে। এছাড়া চ্যানেলগুলো ভালো বাজেট না দেয়ায় অনেক দক্ষ নির্মাতা নাটক নির্মাণ করছে না। সেই কারণেও দর্শক আগের মতো ভালো নাটক পায় না। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, আমি এখন আগের মতো নাটকে অভিনয় করি না। কারণ অভিনয় করার মতো চরিত্র এখনকার নাটকে নেই। আগে একটা নাটকে অনেক চরিত্রের সমন্বয় থাকতো। এখন নায়ক-নায়িকা ছাড়া নাটকে তেমন আর কাউকে দেখি না। নাটকে যদি কিছু না থাকে দর্শক কেন সেই নাটক দেখবে? বর্তমানে কিছু নাটকে দর্শককে জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়। আবার কিছু নাটকের স্ক্রিপ্ট এতটাই দুর্বল, সেগুলো দর্শকের মনে দাগ কাটে না। আমি মনে করি, আমাদের শিল্পীদের সৌভাগ্য এখনো কিছু দর্শক আমাদের নাটক দেখে। দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে হলে ভালো গল্প-শিল্পী নিয়ে কাজ করতে হবে। নাটকে সিনিয়র শিল্পীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অভিনেত্রী আফরোজা বানু বলেন, আমাদের নাটক দেখার জন্য একটা সময় ভারতীয় দর্শক অপেক্ষা করতো। এখন আমাদের দর্শক তাদের নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করে। আমাদের এই সময়ে নাটকে কোনো বৈচিত্র্য নেই। সব প্রেম-ভালোবাসার নাটক। নাটকগুলোতে পরিবারের গল্প থাকে না। পারিবারিক ড্রামা বলতে যা বোঝায় সেটির সব চরিত্র দর্শক আগে একটি নাটকে দেখতে পেত। এখন এর দারুণ অভাব। একদিকে ফ্যামিলি ড্রামা নির্মাণের সংখ্যা কম। অন্যদিকে এই সময়ের নাটকে গল্পের প্রাধান্য কম থাকে। নায়িকাদের গ্ল্যামারাস উপস্থাপনে বেশি ব্যস্ত নির্মাতারা। দর্শক খোঁজে বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র ভারতীয় সিরিয়ালে তারা দেখতে পায় বলেই সেগুলো দেখছে। দর্শকের ভারতীয় সিরিয়ালে আকৃষ্ট হওয়া আমাদের দেশিয় নাটকের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন নাটক সংশ্লিষ্টরা। এভাবে চলার কারণে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেমন দর্শক হারাচ্ছে তেমনি নাটকেও আসছে না কোনো পরিবর্তন। নাটকের সংগঠনগুলোকে এই বিষয়গুলোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা নেয়ার আহ্বানও জানান তারা।