× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারালো, আলাদা করা হলো লাদাখ

ভারত

পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে
(৪ বছর আগে) আগস্ট ৫, ২০১৯, সোমবার, ২:১৬ পূর্বাহ্ন

কয়েকদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার পারদ যেভাবে চড়ছিল তা থেকে অনুমান করা গিয়েছিল বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মোদী সরকার। রবিবার ও সোমবার বেশ কয়েক দফা উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের শেষে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। এর পরই সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নিয়েছে ভারত সরকার। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি তিনি পড়ে শুনিয়েছেন। এই ঘোষণার ফলে জম্মু-কাশ্মীর গত ৬৯ বছর ধরে যে বিশেষ স্বশাসিত মর্যাদা পেয়ে আসছিল তার অবসান ঘটতে চলেছে। একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভেঙে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে লাদাখকে। এখন থেকে  আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ।
দু’টি জায়গাতেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্ণর নিয়োগ করা হবে।

তবে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা বহাল থাকবে। লাদাখের ক্ষেত্রে কোনও বিধানসভা থাকবে না।  কার্যত এদিন থেকে নতুন করে কাশ্মীরের ইতিহাস লেখা শুরু করেছে মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া নিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, ৩৭০ ধারা কাশ্মীরকে দেশের সঙ্গে এক হতে দেয়নি । তবে বিরোধীদের একাংশ মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে সংসদের দুটি সভাতেই। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, বিজেপি দেশের সংবিধানকে হত্যা করেছে। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এর পরিণতি হবে ধ্বংসাত্মক। তবে অনেক বিরোধী নেতা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মোদি সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। কয়েকদিনে জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ানো হয়েছে। সেখানে মোতায়েন ৩৫ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও ২৫ হাজার জওয়ান। রাজ্যে জঙ্গী হামলার আশঙ্কায় এসব করা হচ্ছিল বলে প্রথমে মনে হয়েছিল। কিন্তু এর পর একের পর এক ঘোষণা করা হয়েছে নানা সিদ্ধান্ত। জম্মু-কাশ্মীর থেকে সব পর্যটকদের চলে যেতে বলা হয়েছে।

বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অমরনাথ তীর্থ যাত্রাও। গত শনিবার থেকে সব স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মানুষের মধ্যে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরপর রবিবার রাতে জম্মু-কাশ্মীরের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা মুফতি  মেহবুবার বাড়িতে এক সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে তা প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কিন্তু এরপরেই  দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। গৃহবন্দি হয়েছেন সাবেক বিধায়ক সাজ্জাদ লোনও। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিপিআইএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে। অনেক দিন ধরেই  জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিরোধিতা করে এসেছে বিজেপি। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারে কাশ্মীর নিয়ে এই প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছিল। ইস্তেহারে জানানো হয়েছিল, কাশ্মীরি পন্ডিতদের সম্মানের সঙ্গে ফেরাতে ও নিরাপত্তা দেওয়া বিজেপির অন্যতম এজেন্ডা।

কি এই ৩৭০ ধারা
এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ স্বশাসিত মর্যাদা দেওয়ার উল্লেখ ছিল। এই ধারা অনুযায়ী , প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যোগাযোগ-সহ কিছু বিষয় ছাড়া যেকোনও আইন জম্মু-কাশ্মীরে প্রয়োগ করতে সংসদকে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের সম্মতি নিতে হতো। নাগরিকত্ব, সম্পত্তির মালিকানা ও নাগরিক অধিকার সম্বন্ধীয় বিষয়ে রাজ্যের বাসিন্দারা পৃথক আইনের আওতায় ছিলেন। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দারা সেই আইনের আওতায় ছিলেন না। এই ধারা অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধান পুরোপুরি মানতে হতো না।  জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব পৃথক সংবিধান ছিল। আইনের এই ধারায় বলা ছিল, কাশ্মীরের মানুষই কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবেন। ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষ জম্মু-কাশ্মীরে কোনও সম্পত্তি কিনতে পারতেন না।  কেন্দ্রীয় সরকার কোনও রকম আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবে না। একমাত্র যুদ্ধ হলে ও শত্রুরাষ্ট্র আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলেই কেন্দ্র জরুরি অবস্থা জারি করার অধিকারী ছিল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর