× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিদায় সুষমা স্বরাজ

ভারত

কলকাতা প্রতিনিধি
(৪ বছর আগে) আগস্ট ৮, ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের আকস্মিক প্রয়াণে গোটা ভারত শোকস্তব্ধ। মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে (এইমসে) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বুধবার সকালে তার জনপথ রোডের বাড়িতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা ও তার গুণমুগ্ধরা। দুপুরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিজেপির সদর দপ্তরে। সেখানেও দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এরপর তার মরদেহ লোদি ঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহ করা হয়েছে। সেখানেই বিকালে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সহ দলের নেতারা।
বিরোধী নেতারাও সেখানে ছিলেন। এদিন সকালে সুষমার বাড়িতে সুষমাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চোখে পানি এসে গিয়েছিল। শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে গিয়ে মরদেহে ফুল দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ ও উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুও। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে স্যালুট জানাতে দেখা গেছে সুষমাকে লক্ষ্য করে। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীসহ মোদি মন্ত্রিসভার সকলেই। লালকৃষ্ণ আদভানী, মুলায়ম সিং যাদবের মতো বর্ষীয়ান নেতারাও শ্রদ্ধা জানাতে সুষমার বাসভবনে গিয়েছিলেন। সকলেই অশ্রু নিবারণের চেষ্টা করেছেন। সুষমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা রাম গোপাল যাদব। সুষমার প্রয়াণে ২ দিনের শোক পালনের কথা ঘোষণা করেছে দিল্লি ও হরিয়ানা সরকার। মঙ্গলবার রাতেই সুষমার প্রয়াণে টুইট করে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ভারতীয় রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। অসাধারণ নেত্রীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। এদিন অমিত শাহ বলেছেন, ওর মৃত্যু গোটা দেশের রাজনীতির পক্ষে অপূরণীয় ক্ষতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গত পাঁচ বছরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গোটা বিশ্বে দেশের খ্যাতি বাড়িয়েছেন সুষমা। অন্যদিকে, বিজেপি প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী বলেছেন, দলের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। মহিলাদের রোল মডেল ছিলেন তিনি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সুষমা টুইটে প্রধানমন্ত্রীকে কাশ্মীর প্রসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই দিনটা দেখার জন্য তিনি জীবনভর অপেক্ষা করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তার শেষ কথা হয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী হরিশ সালভের সঙ্গে। তাকে তিনি বুধবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে পাক জেলে বন্দি কুলভূষণ যাদবের মামলা লড়ার পারিশ্রমিক হিসেবে এক লাখ রুপি নিয়ে যেতে বলেছিলেন। সালভে নিজেই কোনো পারিশ্রমিক নিতে চাননি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাকে ভূষিত করেছিল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে। আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন জননেত্রী। অসাধারণ বাগ্মী এবং দলমতনির্বিশেষে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন তিনি। সবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তিনি। আর তাই সকলের প্রিয় ‘ম্যাম’ হয়ে উঠেছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম তাকে ‘সুপার মম’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। পাসপোর্ট থেকে ভিসা সমস্যা, বিদেশে গিয়ে আটকে পড়া, হানিমুনে একা যেতে হচ্ছে, দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় টুইট করেছেন তাদের প্রিয় ‘সুষমাজি’কে। আর তাদের কাউকেই নিরাশ করেননি ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু দেশের মানুষ নয়, সুষমা স্বরাজের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হননি এদেশে ঘুরতে আসা ভিনদেশিরাও। দেশের মানুষের সাহায্যার্থে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি ছিল তার। দেশের সুনাম রক্ষায় তিনি যেন ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী। একনজরে ফিরে দেখা যাক ‘সুপার মম’ সুষমা স্বরাজকে-
কৈলাস মানস সরোবরে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন এক ষাটোর্ধ্ব দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী, দুজনকে আলাদা আলাদা দলে নির্বাচন করায় মুশকিলে পড়ে সোজা সুষমা স্বরাজকে টুইট করেন চন্দর নন্দী। যার জবাবে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে দিয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। ‘তোমাদেরকে আলাদা করে কম্পিউটার অপরাধ করেছে, ‘সুষমা স্বরাজের করা সেই টুইট ভাইরাল হতে সময় নেয়নি।
ভিসা না পাওয়ায় বিয়ে আটকে যেতে বসেছিল এক তরুণীর। সঙ্গে সঙ্গে টুইট সুষমা স্বরাজকে। সমস্যার কথা জানামাত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সুষমা মনে করতেন, বিদেশের দরবারে ভারতের সুনাম রক্ষার গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। তাই এদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি নাগরিকদের প্রতি অন্যায়ও তিনি বরদাশত করেননি। উত্তরপ্রদেশে এক সুইস যুগল নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় দোষীরা যাতে শাস্তি পান, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। আক্রান্ত সুইস যুগলের চিকিৎসাতেও ছিল তার কড়া নজর।
ভারতে ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক ডাচ্‌ যুবতী। ফেসবুকে ঘটনার কথা পোস্ট করে জানায় ওই যুবতীর পরিবার। একথা জানামাত্রই মাঠে নেমেছিলেন সুষমা স্বরাজ। খুঁজে বের করে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও মানবিকতাকেই সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দুই পাকিস্তানি নাগরিককে অবিলম্বে ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গত বছর দীপাবলির সময়েও কালবিলম্ব না করে এক পাক শিশুর মেডিকেল ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। সন্তানের চিকিৎসার জন্য ভিসা মঞ্জুরের আবেদন জানিয়ে অসহায় বাবা টুইট করেছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। আবদুল্লাহ নামে ওই পাক শিশুকে ‘দীপাবলি উপহার’ দিতে দেরি করেননি সুষমা স্বরাজ। টুইট পাওয়ার পরই ইসলামাবাদ হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। টুইট বার্তায় ওই শিশুর বাবাকে তিনি ভিসার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন।
এরকমই দিনের ২৪ ঘণ্টা সবার সব প্রয়োজনে পাশে থেকেছেন তিনি। একবার এক নেটিজেন মজা করে লিখেছিলেন, সারাদিন সবার এত টুইটের জবাব নিশ্চয়ই সুষমা স্বরাজ নিজে করেন না। যার উত্তরে সুষমা স্বরাজ মজা করে লিখেছিলেন, ‘আমি-ই করি, আমার ভূত নয়।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো গুরুদায়িত্ব সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগেও তার কোনো ঘাটতি ছিল না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর