যে কোনো মৃত্যুই তৈরি করে গভীর শূন্যতার। আর সে মৃত্যু যদি হয় খ্যাতিমান কারোর, তাহলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা অপরিমেয়। তেমনই দুই কীর্তিমান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। এই দুই মহান মানুষের চলে যাওয়ার আট বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১১ সালের এই দিনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ির কাছে জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর প্রাণ হারান। এ সময় তাদের সঙ্গে প্রাণ হারান আরও তিনজন। মারাত্মকভাবে আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ চারজন। তারেক মাসুদ তার পরিচালনায় নির্মিতব্য ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফেরার পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হন।
তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, মাইক্রোবাস চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও শর্মী জামালের। নির্মাতা হিসেবে তারেক মাসুদ এ দেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করিয়েছেন। তার পরিচালিত ‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’, ‘রানওয়ে’, ‘অন্তর্যাত্রা’ ছবিগুলো সর্বমহলে প্রশংসা পেয়েছে। এমনকি কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বিশেষ সমালোচক পুরস্কারও জয় করেছেন তারেক মাসুদ। এ নির্মাতার ‘মুক্তির গান’, ‘মুক্তির কথা’ কিংবা ‘মাটির ময়না’ স্বাধীনতা যুদ্ধের এক প্রামাণ্য দলিল। মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই চলে যান মেধাবী এই চলচ্চিত্রকার। আশির দশকের গোড়ার দিকে খ্যাতনামা শিল্পী এসএম সুলতানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ দিয়েই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের শুরু। তখন দুই বন্ধু এসএম সুলতানের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়ান। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সাত বছর সুলতানের সান্নিধ্যে থেকে নির্মাণ করেন প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’। এরপর তারেকের অধিকাংশ ছবিতে ক্যামেরার জাদু দেখিয়েছেন মিশুক মুনীর। সিনোমাটোগ্রাফার হিসেবে তিনি নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান, আশফাক মুনীর মিশুক ক্যামেরা ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত পেয়েছিলেন। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসি’র ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। একুশে টিভির হেড অব নিউজ অপারেশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যূন্ত তিনি এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অনেক প্রতিষ্ঠিত সংবাদকর্মীর আদর্শ ছিলেন মিশুক মুনীর।