দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, সকল প্রকার লোভ-লালসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারও প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাত বা স্বজনপ্রীতি দেখানো যাবে না। নির্মোহ দায়িত্ব পালনে আমাদের কোনো ভাই, বন্ধু বা স্বজন নেই। আর এভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যায়। গতকাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দুদক আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চেয়ারম্যান বলেন, প্রতি বছরই জাতির পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমরা আলোচনা সভা করি, কবিতা আবৃত্তি হয়, তথ্য চিত্র দেখি, শপথ গ্রহণ করি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় কেউ কেউ শপথ ভঙ্গও করি। শপথ যদি ভঙ্গ না হয়, তাহলে স্ব-স্ব দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার কথা।
আমাদের সকলের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়ার কথা, তা তো সেভাবে অনুধাবন করা যাচ্ছে না। মহান আল্লাহকে হাজির-নাজির রেখে আপনারা বলুন, আপনাদের দায়িত্ব কি সঠিকভাবে পালন করছেন? এ ব্যাপারে আমার বেশ সংশয় রয়েছে। সবাইকে বিষয়টি উপলব্ধি করার পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন রয়েছে। নিজেকে নিজেই আবিষ্কার করুন। প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত সকল প্রকার লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে মোহমুক্ত থেকে করেন কি না? এর উত্তর আমি প্রত্যাশা করব হ্যাঁ, তবে সমাজের অনেকেই উত্তর দিবেন না।
আমাদের সকল প্রকার চাপের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। সেটা সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাগত হতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিটি দপ্তর বা সংস্থার বিভাজিত কর্ম রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি নিজ নিজ বিভাজিত কর্ম সুচারুভাবে পালন না করে শুধু মিটিং-সিটিং নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখি তাহলে এসব আনুষ্ঠানিকতা হবে অর্থহীন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনে যার যার কাজ ঠিক সময়ে না করলে অনিয়মের সুযোগ এবং প্রশ্ন ওঠার অবকাশ তৈরি হয় বলে মনে করেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদান করেই বলেছিলাম, প্রতিটি অভিযোগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। অনেকেই সময় স্বল্পতার কথা বলেন। আমরা বিধি পরিবর্তন করে সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। তারপরও নির্ধারিত সময়ের ভেতরে অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না কেন? এই টাইম-লাইন না মানার কারণেই তদবিরবাজি হয়, ঘুষখোররা ঘুষ খাওয়ার সাহস পায় এবং সর্বোপরি কমিশনের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আলোচনায় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, আক্তার হোসেনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।