× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিরল রোগের সফল অপারেশন /রাবেয়া ও রোকেয়ার মুখে হাসির ঝিলিক

শেষের পাতা

কাজী সোহাগ
১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে মাথা জোড়া লাগানো যমজ বাচ্চা আলাদা করা। সেই চ্যালেঞ্জকে সফলতার সঙ্গে উতরে গেছেন বাংলাদেশেরই কয়েক চিকিৎসক। প্রায় ৩৩ ঘণ্টার সফল অপারেশনে এখন আলাদাভাবে স্বাভাবিক জীবন ধারণ করছে রাবেয়া ও রোকেয়া নামের দুই শিশু। কিছুদিন আগেও তাদের দু’জনের মাথা জোড়া লাগানো ছিলো। কষ্টদায়ক ছিলো সে জীবন। কিন্তু এখন তাদের মুখে হাসি। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়েছে তাদের বাবা, মা থেকে শুরু করে সবার মাঝে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ঢাকায় গত ১লা আগষ্ট ৩৩ ঘন্টার ওই অপারেশনে সিএমএইচ এর নিউরো এ্যানেসথেসিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে নিউরো ও প্লাষ্টিক সার্জনগণসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট ,সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের প্রায় শতাধিক সার্জন ও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন হাংগেরীর একটি বিশেষজ্ঞ দল। ১১ই আগষ্ট রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাবেয়া ও রোকেয়াকে দেখতে সিএমএইচে যান।

এসময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুই দশমিক ৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ বাচ্চাদের মধ্যে মাত্র একটি মাথা জোড়া লাগানো বাচ্চা জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ ভাগ মাথা জোড়া লাগানো শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং আরো এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তবে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু বেঁচে থাকে জমজ মাথা নিয়ে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ থাকে। এটি একটি বিরল ধরনের অপারেশন। সারা বিশ্বেই খুব অল্প পরিমাণে হয়েছে। সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়। ২০১৬ সালের ১৬ই জুলাই পাবনার চাটমোহরে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মানব রাবেয়া ও রোকেয়া। যাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ক্রানিওপেগাস টুইনজ, কনজয়েন্ট টুইন অথবা মাথাজোড়া লাগানো শিশু।

পাবনার একটি ক্লিনিকে শিক্ষক দম্পতির জন্ম নেয়া এই দুই শিশু এবং তার পিতা মাতাকে জন্মের পরই পেতে হয়েছিল সমাজের কুসংস্কারচ্ছন্নতার পরিচয়। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর  নির্দেশনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হয়। সেখানে ডাঃ হাবিব ই মিল্লাত এবং ডাঃ সামন্তলাল সেন সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেন। হাংগেরীর একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হাংগেরী জনগনের পক্ষ থেকে এদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জটিল এই শল্য চিকিৎসা করা সম্ভব বলে মত দেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই শল্য চিকিৎসাটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে হাংগেরীতে ৪৮টি ছোট বড় সার্জারী সম্পন্ন হয়। ২২ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়ার অস্ত্রপচারের সবচাইতে জটিল অংশ ুজমজ মস্তিষ্ক্থ আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হাংগেরী থেকে তাদেরকে ঢাকা সিএমএইচ- এ নিয়ে আসা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সেনাপ্রধান সমস্ত সহযোগিতার জন্য ডিজিএমএসকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। ১ আগষ্ট পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়ে ৩৩ ঘন্টা ব্যাপী চলে এবং ২ আগষ্ট সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়। বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকার পোষ্ট এ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিটে অবস্থান করছে।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং শিশু হাসপাতালের নিউরো ইনটেনসিভিস্টদের তত্ত্বাবধানের রয়েছে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,এধরনের অপারেশন অত্যন্ত জটিল। সাফল্যের হারও খুব বেশী নয়। অপারেশনের পর এখানে তারা কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্ত্ত মনে রাখা দরকার এধরনের অস্ত্রপচারে অপারেশনের পরবর্তী ঝুঁকি এবং জটিলতা অত্যন্ত বেশী। তারা জানান, রাবেয়া ও রোকেয়ার আরও একটি অপারেশন (ক্রেনিও প্লাষ্টি) নির্ধারিত রয়েছে ২/৩ মাস পর। আমরা মনে করি, এধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও হাংগেরীর জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। যে অন্ধকার অমানিসার মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতি পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় হাংগেরীর একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল- এর সহায়তায় তারা অপার সম্ভাবনা দেখতে পারছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর