নিয়ন্ত্রণ রেখায় মুখোমুখি চিরশত্রু ভারত ও পাকিস্তান। থেমে থেমে চলছে গুলির লড়াই। এরইমধ্যে ভারত সরকার অবরুদ্ধ করে রেখেছে কাশ্মীর উপত্যকা। দুই দেশের সমপর্ক এ নিয়ে যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে ঠিক সে মুহূর্তেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দিয়েছেন পাল্টা প্রতিশোধের হুঙ্কার। ফলে নতুন করে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে যুদ্ধের অঘোষিত প্রস্তুতি।
এরইমধ্যে উভয় পাশে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে ১০ জন। এরমধ্যে রয়েছে ৮ সেনাসদস্য। পাকিস্তান দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৫ ভারতীয় সেনা।
একইসঙ্গে ভারতের পাল্টা হামলায় নিজেদের ৩ সেনা নিহত হওয়ার কথাও নিশ্চিত করেছে দেশটি। তবে নিজেদের সেনা নিহত হওয়ার দাবিকে অস্বীকার করেছে ভারত। পাক সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দুই বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে গুলিতে। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গাফুর বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে চলমান পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে লাইন অব কন্ট্রোল সংলগ্ন অঞ্চলে গোলাগুলি বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
সীমান্তে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছে তখন এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত ৭০ বছর ধরে কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম নিরাপত্তা পরিষদে উঠছে এই ইস্যু। ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে শুক্রবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসার কথা ছিল নিরাপত্তা পরিষদের। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক এখনো শুরু হয়নি। করাচিভিত্তিক গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, এ বৈঠক থেকেই আসবে কাশ্মীর বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত।
মূলত, চীনের অনুরোধেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে কাশ্মীর নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ সর্বশেষ বৈঠক করেছিল ১৯৬৫ সালে। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে দ্য গালফ নিউজ। খবরে বলা হয়, ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার ব্যাপারে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে লিখিত অনুরোধ করেছিল চীন। বুধবার পরিষদের অনানুষ্ঠানিক এক আলোচনা সভায় অনুরোধটি বিবেচনা করা হয়। এর আগে জাতিসংঘের কাছে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল পাকিস্তান। তবে সে আবেদনে সাড়া না মেলায় নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আবেদন জানান, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। তাদের আবেদনে সমর্থন জানিয়ে পরিষদের কাছে লিখিত আবেদন জানায় পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন। তবে বৈঠকটির ধরন রুদ্ধদ্বার হওয়ায় এতে অংশ নিতে পারবে না পাকিস্তান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকটিকে সমপূর্ণরূপে নিরাপত্তা বৈঠক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। রুদ্ধদ্বার বৈঠক হওয়ায় এর পুরো প্রক্রিয়া গোপন থাকবে। বৈঠকটি সমপ্রচার করা হবে না। এমনকি প্রবেশ করতে দেয়া হবে না সাংবাদিকদেরও। নাম না প্রকাশিত ওই কূটনীতিক জানিয়েছেন, চীন চেয়েছিল বৈঠকটি বৃহসপতিবারই অনুষ্ঠিত হোক। তবে সেদিন কোনো বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারিত না থাকায় গতকাল বৈঠকের দিন নির্ধারিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগস্ট মাসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছে পোল্যান্ড। পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, বৈঠকটির সময়সূচি নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি জোয়ানা রোনেকা। জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোদি জানিয়েছেন, এরইমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দখলীকৃত জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতিতে। তার দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনা করবে বলে আমরা আশা করি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশন এবং জাতিসংঘ সনদের অধীনে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন মহাসচিব গুতেরাঁ। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মানবাধিকার নিয়ে তিনি গত সপ্তাহে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
৫ই আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীরকে দেয়া স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেয় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এর আগ থেকেই অঞ্চলটিতে জারি করা হয় কারফিউ। বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ধরনের ইন্টারনেট ও মোবাইলফোন পরিসেবা। পুরো অঞ্চলজুড়ে মোতায়েন করা হয় প্রায় আড়াই লাখ সামরিক সেনা। বহির্বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় কাশ্মীরিদের। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশ বহু আগ থেকেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে। উভয় দেশেই কাশ্মীরের কিছু অংশ রয়েছে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে। চীন ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের বাকি চার সদস্যই প্রকাশ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে।