সিলেটের ওসমানীনগরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত থাকলেও উপজেলার হাট-বাজারগুলোর ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার দিকে কারো নজর নেই। গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর বাজারে পানি নিষ্কাশনের খাল এবং কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। এতে আবর্জনা ও পলিথিনে ভরাট হয়ে গেছে খাল ও কৃষি জমি। সম্প্রতি কোরবানির পশুর চামড়াও বিক্রি করতে না পেরে বাজারের বিভিন্ন অংশে ফেলে গেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবেশ দূষণে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এলাকার জনজীবন। যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গুসহ নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ।
জানা যায়, উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র গোয়ালাবাজার থেকে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। কিন্তু বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে বাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কৃষিজমি এবং খালে গড়ে তুলেছে ময়লার ভাগাড়। সড়কের পাশে ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে যাতায়াত করতে হয় পথচারীদের।
তাজপুর এবং দয়ামীর বাজারে খালের ওপর ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলায় ভরাট হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের খাল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামপ্রতিক সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখলেও বাজারের এই দুরবস্থার খবর রাখছেন না কেউ। ফলে এলাকার লোকজন ডেঙ্গুসহ নানা ধরনের রোগ আতঙ্কেও মধ্যে রয়েছেন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালাবাজারের (পূর্ববাজারে) নশিওরপুর রাস্তার পাশের কৃষি জমির উপর রয়েছে ময়লা আবর্জনার বিশাল ভাগাড়। দীর্ঘদিন থেকে বাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কৃষি জমিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে জমির অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। লোকজন এর পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে ধরতে হচ্ছে। বাজারের সামান্য দূরে গয়নাঘাট ও গোয়ালাবাজার ইউপি অফিসের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। এছাড়া মহাসড়কের পাশে অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তাজপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, খালের ওপর ময়লা ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। যার কারণে খালে পরিণত হওয়া একসময়কার বিশাল বুড়ি নদীর শেষ চিহ্নটুকু ভরাট করা হয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে এই খাল দিয়ে পানি চলাচল করতে পারলেও এখন খালের ওপর দিয়ে লোকজন হাঁটতে পারছে। নদীর অন্যান্য অংশের মতো এই শেষ চিহ্নটুকু ভরাট হয়ে যাওয়ায় আগামীতে দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দয়ামীর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দয়ামীর-দয়ালং খালে ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলায় খালের বাজার সংলগ্ন অংশ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ময়লার আবর্জনা দুর্গন্ধে চারদিকের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিরাজ করছে। খালের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গ্রাম্য সড়কের যাতায়াতকারী এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন দুর্গন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সরকারি কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। কোটি টাকার বেশি রাজস্ব প্রদানকারী এই বাজারে ময়লা ফেলার জন্য কোনো গাড়িও নেই। বাজারের ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য গাড়ি এবং আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি উপজলা প্রশাসনের কাছে।
দয়ামীর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এস টি এম ফখর বলেন, বাজারের ময়লা ফেলার জন্য সরকারি নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। দয়ালং খালটি খননের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করি অচিরেই তা হবে। তাজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী বুড়ি নদীর ইসমাইলিয়া খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাজারের ময়লা ফেলার জন্য সরকারি কোনো জায়গা পাওয়া যায় কিনা এ ব্যপারে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, বাজারের ময়লা ফেলার জন্য সরকারি নির্দিষ্ট জায়গা আছে। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি দেখভাল করার কথা।